
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে চার দিন ধরে বন্ধ থাকা দূরপাল্লার বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর বাস কাউন্টার খুলে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত বাস চালু হয়নি। পরিবহনশ্রমিকেরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়ায় তাঁরা গাড়ি চালাবেন না।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মালিকপক্ষ বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকেরা তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করেছিলেন। মালিকদের আশ্বাসে দুই দিন পর তাঁরা কাজে ফিরলেও আশানুরূপ বেতন-ভাতা বৃদ্ধি না হওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর থেকে আবার কর্মবিরতিতে যান। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত একতা ছাড়া বাকি সব পরিবহনের বাস বন্ধ ছিল।
আজ বেলা দুইটার দিকে উত্তরবঙ্গ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানান। তবে বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি বলেন, দাবি মানা হলেও কয়েকজন শ্রমিক বাস চলাচলে বাধা দিচ্ছেন।
এর আগে ঢাকায় বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সভা হয়েছে। সভায় মালিক ও শ্রমিকদের বৈঠকে চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। রাজশাহী থেকে ডাবল ট্রিপে চালককে ১ হাজার ৭৫০, সুপারভাইজারকে ৭৫০ ও হেলপারকে ৬৫০ টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বা রহনপুর থেকে ট্রিপে চালক ১ হাজার ৯৫০, সুপারভাইজার ৮০০ ও হেলপার ৭০০ টাকা পাবেন। খোরাকি ভাতা ২১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়।
তবে এই সিদ্ধান্ত মানছেন না রাজশাহীর পরিবহন শ্রমিকেরা। তাঁরা একতা পরিবহনের মতো সুযোগ-সুবিধা দাবি করছেন। তাঁরা চান, একতা পরিবহনের সুবিধা অনুযায়ী, গাড়ির সব সিটে যাত্রী থাকলে প্রতি ট্রিপে তিনজন যাত্রীর ভাড়া পাবেন চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার।
দেশ ট্রাভেলসের চালকের সহকারী রাহাত বলেন, চালককে ট্রিপপ্রতি ২ হাজার ২০০, সুপারভাইজারকে ১ হাজার ২০০ ও হেলপারকে ১ হাজার ১০০ টাকা দিতে হবে। না হলে ট্রিপপ্রতি যে টাকা বাড়ানো হয়েছে, তার সঙ্গে অন্তত দুজন যাত্রীর ভাড়া ফ্রি করে দিতে হবে।
একজন চালক বলেন, ‘বাসে যাত্রী ছাড় দিলে যে বেতন বাড়ানো হয়েছে, তা মেনেই গাড়ি চালাব। আর যদি না মানা হয়, তাহলে সবাইকে ট্রিপপ্রতি বেশি টাকা দিতে হবে।’
বিকেলে বাস চলাচলের খবরে যাত্রীরা টিকিট কিনে অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত বাস ছাড়েনি। রাজশাহী নগরের শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামীণ ট্রাভেলসের একটি বাস যাত্রী তুললেও সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাড়তে পারেনি। যাত্রীদের টিকিট ফেরত দিতে হয়েছে। এ সময় পরিবহনশ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনাও দেখা দেয়।
রেদোয়ান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘শুনেছি বাস চারটার দিকে ছাড়বে। এসে দেখি, শ্রমিকেরা বাস চালাবেন না।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা তোফায়েল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গাড়ি চলবে না বলে মালপত্র নামিয়ে দিল। এখন ঢাকায় যাব, নাকি আবার ফিরে যাব, বুঝতে পারছি না।’
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস চলছে। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।