Thank you for trying Sticky AMP!!

রায়হানই ছিলেন পরিবারের অবলম্বন, মৃত্যুর খবর জানেন না মা-বাবা

রায়হান সিকদার আরিয়ান

একমাত্র ছেলে আহতের খবর শুনে চাচাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বরিশালের মজিবর সিকদার। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটায় তাঁদের বহনকারী বাসটির অবস্থান ছিল শরীয়তপুরে। কিন্তু তখনো মজিবর সিকদার জানেন না তাঁর একমাত্র ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৫) মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

নরসিংদীতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত সাতজনের একজন বরিশালের মুলাদী উপজেলার রায়হান সিকদার। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর মা–বাবাকে রায়হানের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। রায়হান আহত হয়েছেন বলেই জানেন তাঁর মা–বাবা।

Also Read: মর্গে সারি করে রাখা সাতজনের লাশ, শনাক্ত করতে এসে স্বজনদের আহাজারি

মুলাদী পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা রায়হান সিকদার নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। এখন ওই কলেজে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার এসবি নিটিং নামের একটি পোশাক কারখানার চাকরি করতেন। অসচ্ছল পরিবার চলত তাঁর আয়েই।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছেলের দুর্ঘটনার খবর শুনে বাড়িতে উদ্বিগ্ন রায়হানের মা পারভীন বেগম। তিনি কান্নাকাটি করছেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া রায়হানের ছোট বোন মারিয়া আক্তার মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, নিজেও কান্না চেপে রাখতে পারছেন না।

নিহতদের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে

প্রতিবেশীরা জানান, রায়হানের বাবা মজিবর সিকদারের পৈতৃক সূত্রে সামান্য জমিজমা আছে। কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলছিল না। তাই তিনি ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন। সেই আয়ে বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে রায়হান ও ছোট মেয়ে মারিয়ার পড়াশোনা করে। কিন্তু করোনার সময় তাঁর কাজ চলে যাওয়ায় তিনি গ্রামে ফেরেন। তখন অর্থসংকটে পড়েন। এ জন্য রায়হান পড়াশোনা শেষ না করেই চাকরিতে যোগ দিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিলেন।

Also Read: সহকর্মীরা মিলে ঘুরতে যাচ্ছিলেন সিলেটে, দ্রুতগতির ট্রাক কেড়ে নিল সাতজনের প্রাণ

শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটায় কথা হয় আরিয়ানের বাবা মজিবর সিকদারের সঙ্গে। তিনিও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যাচ্ছি। ছেলের কাছে।’

স্বজনেরা জানান, রায়হান বিয়ে করেননি। বিয়ের কথা তুললে তিনি বলতেন, আগে ছোট বোনের পড়াশোনা শেষ হোক, পরিবারটা দাঁড়াক। তিনিও পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি নেন। এরপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। কিন্তু আরিয়ানের সেই স্বপ্ন ভেঙেচুরে গেছে এই দুর্ঘটনায়। এতে পুরো পরিবার এখন গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকায় পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটির সাতজন নিহত ও চারজন গুরুতর আহত হন।

নিহত সাতজন হলেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন (২৭), ঝালকাঠির রাজাপুর থানার পারগোপালপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), মাদারীপুরের কালকিনি থানার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আউয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও কুষ্টিয়ার সদর থানার খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)।