ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্ট ও সৌখিন এক্সপ্রেসের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায়
ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্ট ও সৌখিন এক্সপ্রেসের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায়

পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার, তবু ময়মনসিংহ-ঢাকায় বাস বন্ধ

ময়মনসিংহে প্রশাসনের আহ্বানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মী ও পরিবহনশ্রমিকেরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এরপর শনিবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ঢাকাগামী বাস চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে।

এনসিপির হালুয়াঘাট উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী ও জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানকে ইউনাইটেড পরিবহনের শ্রমিক লাঞ্ছিত করেছেন, এমন অভিযোগে এনসিপি নেতা-কর্মীরা শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা চার দফা দাবি জানান।

এনসিপির নেতা–কর্মীদের দাবিগুলো হলো, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হকের (শামীম) সব গাড়ি বন্ধ করে জব্দ; ফ্যাসিস্টের কর্মচারী যাঁরা এখনো মাসকান্দা বাসট্যান্ডে চাকরি করছেন, তাঁদের চাকরিচ্যুত করা; শহীদ সাগর হত্যায় শামীমসহ ময়মনসিংহের সব ফ্যাসিস্টকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার; যাত্রীদের সব ধরনের হয়রানি বন্ধ এবং যেকোনো উৎসবে, বিশেষ করে ঈদ-পূজার সময় গাড়ির ভাড়া বৃদ্ধি না করা।

জেলা এনসিপির সদস্য মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের চার দফা দাবি প্রশাসন মেনে নিয়েছে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিস্টদের গাড়িগুলোর বিষয়ে কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব আশ্বাস পেয়ে আমরা বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি।’

এদিকে ইউনাইটেড বাস কাউন্টারের সামনে এনসিপি নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি ও এক শ্রমিককে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার প্রতিবাদে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা সড়কের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায় পরিবহনশ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে, দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

বিকেলে জেলা প্রশাসন শ্রমিকনেতা ও এনসিপির নেতা–কর্মীদের নিয়ে আলোচনায় বসে। এনসিপির নেতারা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে যাবেন এবং বাস চলাচলে কেউ বাধা দেবেন না, এমন আশ্বাস পেয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শ্রমিকেরাও সড়ক থেকে সরে যান। কিছু বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েও যায়। কিন্তু বিকেল পাঁচটা থেকে পুনরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকার মালিকদের নির্দেশে বাসচালক ও শ্রমিকেরা বাস চালানো বন্ধ করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় ইউনাইটেড ও সৌখিন এক্সপ্রেসের বাসই বেশি চলে। দুটি প্রতিষ্ঠানের বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, মাসকান্দা টার্মিনাল থেকে ইউনাইটেড পরিবহনের ৭০টি ও সৌখিন এক্সপ্রেসের ১৫০টির মতো বাস চলাচল করে। বাসগুলো ঢাকা ও ময়মনসিংহের মালিকদের। তবে বাসের বেশির ভাগই ঢাকার মালিকদের এবং কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সড়ক অবরোধ প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত স্থানীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে, তা ঢাকার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়নি। এ কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে আলোচনা চলছে।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহরোয়ার্দী হোসেন বলেন, এনসিপির দাবি ‍ছিল, ইউনাইটেড পরিবহনের ১৬টি গাড়ি চলবে না। শ্রমিকনেতারা আলোচনা করে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। গাড়িগুলো জব্দ করার বিষয়ের যে দাবি ছিল, সেটি আইনগত প্রক্রিয়া বলে তাঁদের জানানো হয়েছে। ওই অবস্থায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান থেকে সরে যান। তিনি বলেন, ‘ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি শুনেছি। এটি মালিকপক্ষের ডিসিশন, আমাদের কথা বলতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’

ময়মনসিংহ থেকে কোনো ফ্যাসিস্টের গাড়ি চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুফিদুল আলম। এই আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটুকু জানতে পারলাম, ময়মনসিংহ পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতি মেনে নিতে পারছে না। এ কারণে তারা হয়তো বাস বন্ধ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আমরা আলাপ–আলোচনা চালিয়ে যাব।’