
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। সম্প্রতি ফেসবুকে একাধিক পেজ খুলে স্থানীয় বিএনপির একটা বড় অংশ আসনটিতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তুলেছে।
ফেসবুকে পরিচালিত পেজগুলোর একটি ‘জননেতা কাইয়ুম ভাইয়ের সমর্থক’। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবদুল কাইয়ুমের সমর্থনে পোস্ট করে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি করেছেন।
৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। এ সময় সিলেট-৩ আসনে লন্ডনপ্রবাসী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিককে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিএনপির চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা ১৯ বছর দেশে আসেননি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি দেশে ফিরে তৎপর হন। তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে ফেসবুকে দল ও দলের বাইরের অনেকে সমালোচনা করে মন্তব্য করছেন।
ফেঞ্চুগঞ্জের উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমেদ ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। একটিতে তিনি লিখেছেন, ‘মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটির অধিকাংশ নেতার রাজনৈতিক যোগাযোগ বা যৌথ কর্মকাণ্ডের কোনো রেকর্ড নেই। দলের শৃঙ্খলার কারণে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ না করলেও আড়ালে অসন্তুষ্টির গুঞ্জন বাড়ছে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এম এ মালিক ও আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ছাড়া এখানে বিএনপির আরও কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থাকা দলের গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতাকে ডিঙিয়ে মালিকের মনোনয়ন পাওয়া এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এম এ সালাম দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কয়েক দিন পর অনেকটা নীরবে যুক্তরাজ্যে ফিরে যান। অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দেওয়া কাইয়ুম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে চুপসে গেছেন।
জানতে চাইলে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁর পক্ষেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। আর ফেসবুকে সমর্থকেরা কী লিখছে, সেটা আমার জানা নেই।’
যোগাযোগ করলে এম এ মালিক প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, দলে কোনো অসন্তোষ নেই। কাইয়ুম চৌধুরীসহ বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত সবাই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। এম এ সালাম লন্ডনে চলে গেলেও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন। আবদুল আহাদ তাঁর সঙ্গে সভা-সমাবেশে যাচ্ছেন। তৃণমূলে কোনো ক্ষোভ নেই, কেউ তাঁর বিপক্ষে কথা বলছেন না। তিনি বলেন, ‘দেশে ছিলাম না, এটা কোনো সমস্যা নয়। সবার হাতেই মোবাইল আছে। কার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না? কারা বলছে আমি জনবিচ্ছিন্ন? খোঁজ নিয়ে দেখেন, আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলাম। এর মূল্যায়নই দল আমাকে করেছে।’
মালিকের অনুসারী নেতা-কর্মীরা বলেন, এম এ মালিক দেশে অবস্থান না করলেও সিলেট-৩ আসনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি ঠিকই নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে তিনি তাঁর ইতিবাচক কাজেরই ফল পেয়েছেন। তাঁর মনোনয়ন নিয়ে একটা গোষ্ঠী অযথা নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে।
এদিকে সিলেট-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠপর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ। তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, বিএনপির প্রার্থী এখানে তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত। এমনকি নিজ দলের অনেকের সঙ্গেই তাঁর চেনা-পরিচয় কম। এ সুবিধা পাবেন জামায়াতের প্রার্থী।
এখানে এনসিপির প্রার্থী হিসেবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল হুদার (জুনেদ) নাম আলোচনায় আছে। তিনি অনেক দিন ধরে স্থানীয়ভাবে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন সভা–সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া আসনটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা রেদওয়ানুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা আবদুল কাইয়ুম হাজীপুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নজরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইন ও ইসলামী ঐক্যজোটের হাফিজ মাওলানা মইনুল ইসলাম আশরাফী প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা করছেন।