
ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে গতকাল শনিবার। কয়েকটি বাসের জানালার কাচ ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই আশুলিয়া থানায় মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক মো. আনোয়ার হোসেন।
তবে বাদী আসামিদের কাউকে চেনেন না। পুলিশের কথামতো এজাহারে স্বাক্ষর করেছেন। আর পুলিশ বলছে, আসামিরা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী।
মামলার বাদী মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যারা ভাঙচুর করে গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, তাঁরা কারা তিনি ঠিক বলতে পারছেন না। তাঁরা কোনো স্লোগানও দেননি। তাঁর সামনে গাড়ি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন, তিনি সেটা দেখেছেন। তাঁরা কে বা কারা, সেটি তিনি নিশ্চিত নন।
মামলার এজাহারে ৩২ জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, মো. আনোয়ার হোসেন বিকাশ পরিবহনের বাস নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১১-০৬০৬-এর চালক। গতকাল তিনি বাসটি নিয়ে বেলা ৩টা ৫ মিনিটে নিরিবিলি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল-সংলগ্ন শাহজালাল হোটেলের সামনে থেকে ঢাকার আজিমপুর যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পৌঁছালে তিনি আসামিদের বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন ভাঙচুর করতে দেখেন। একপর্যায়ে আসামিরা বাসের সামনে এসে বাসের সব কাচ ভাঙচুর করে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ওই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই স্থানে পৌঁছালে আসামিরা পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়া থানা-পুলিশ ৩টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাস ও দুটি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ জব্দ করে। স্থানীয়ভাবে আসামিদের নাম–ঠিকানা জানতে পারেন আনোয়ার হোসেন। ঘটনার পর বাসমালিকের সঙ্গে আলোচনা করে এবং আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় অভিযোগ করা হয়।
মামলার আসামি ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মো. আসাদুজ্জামান মোহন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা ছাড়াই রাজনৈতিক বিবেচনায় আমাদের হয়রাণি করার জন্য মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা সবাই দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে গাবতলীতে ছিলাম। এরপরও আমাদের আসামি করা হয়েছে। আসামি ৩২ জনের অধিকাংশই বিএনপির সাবেক ও বর্তমান পদধারী নেতা।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, মামলায় আসামি নেতা-কর্মীদের মধ্যে রকি দেওয়ান জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি, আনোয়ার হোসেন (রানা) আশুলিয়া থানা বিএনপির প্রচার সম্পাদক, আইয়ুব খান জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, তমিজ উদ্দিন ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার গাড়ি থিকা ২০০ মিটার আগে (সামনে) হবে, দেখি কতগুলা গাড়ি ভাঙতাছে, চুরমার করে দিচ্ছে। এদিকে আমার স্টাফ (চালকের সহকারী) আইসা বলতেছে, “ওস্তাদ গাড়ি ভাঙতেছে, আপনি গাড়ি ব্যাক (পেছনে ঘুড়িয়ে) দিয়া তাড়াতাড়ি করে গাড়িটা ঘুরাইয়া দেন।” তখন আমি গাড়ি ব্যাক দিছি। তখনই ওরা দৌড়াইয়া আইসা কইতাছে, “ওই গাড়ি ঘুরাইতাছে ওই গাড়ি ধর।” আমি গাড়ি ঘুরাইতে ঘুরাইতে ওরা গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে। আমারে বলে, “তরে গাড়ি বাইর করতে কে কইছে?” আমারে বাড়ি মারতে চাইছে, মনে হয় ওটা দায়ের কোপ ছিল। আমি লাফও মারছি, কোপটাও গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে পড়ছে। আমি দৌড় মারছি। পরে কোনো গ্যাঞ্জাম নাই দেইখা আসছি, দেখি গাড়িতে আগুন জ্বলতেছে। ওরা ৭০-৮০ জন ছিল।’
এজাহারে উল্লেখিত নাম-পরিচয়ের বিষয়ে বাদী মো. আনোয়ার হোসেন কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন বলে জানান।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাকে যে জায়গাতে পুলিশ সিগনেচার (স্বাক্ষর) দিতে বলছে, আমি ঠিক সে জায়গাতেই দিয়েছি। কাউরে কোনো অবস্থায় আমি চিনতে পারি নাই। জান বাঁচে না আমার, আমি লোক চিনব, না জান বাঁচাব। ককটেল বা কোনো কিছু ফোটার শব্দ আমি শুনি নাই। আমি দৌড়াইয়া যখন গেছি, তখন হইতে পারে।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রকাশ্যে করেছেন আসামিরা। তাঁরা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী।