বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন এক বাসিন্দা। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের পূর্ব পাড়া এলাকায়। আজ সকালে
বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন এক বাসিন্দা। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের পূর্ব পাড়া এলাকায়। আজ সকালে

ফেনীর বন্যা

পানি কমেছে, আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন পাঁচ হাজার মানুষ

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ফেনী-পরশুরামের মূল সড়ক থেকে পানি নেমেছে। গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। পানি কমতে শুরু করায় ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যায় বিভিন্ন সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ফেনীর পাঁচ উপজেলা থেকেই বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। সীমান্তবর্তী পরশুরাম, ফুলগাজী উপজেলাসহ ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার প্লাবিত ১১২টি গ্রামের নিচু স্থানে পানি থাকলেও বেশির ভাগ বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। আজ শনিবার নতুন করে কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি।

আজ সকালে সরেজমিনে ফুলগাজীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, কিছু সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। তবে উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো এখনো ডুবে রয়েছে। কিছু বাড়ির উঠানেও হাঁটুপানি দেখা যায়। এসব পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন বাসিন্দারা। অনেকেই রোদে বাড়ির ভেজা মালপত্র শুকাচ্ছেন।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুহুরি নদীর ভাঙনকবলিত উত্তর শ্রীপুর গ্রামের নাপিত এলাকা পরিদর্শন করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম। আজ সকালে

ফুলগাজীর কালির হাটের বাসিন্দা আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ঘরের ভেতরে পানি না থাকলেও উঠানে পানি রয়েছে। পানিতে বাড়ির জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। এখন তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

ফুলগাজীর শ্রীপুর পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা করিম নেছা বলেন, পানিতে তাঁর টিনের ঘরের নিচের অংশ ভেঙেছে। গত বছর বন্যায় তাঁদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগে আবার বন্যার কবলে পড়েছেন তাঁরা। বর্তমানে বাড়িঘর মেরামতের পর্যাপ্ত অর্থ তাঁদের হাতে নেই।

বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও ফুটে উঠেছে। ধসে যাওয়া বাড়িঘর মেরামতেও ব্যস্ত দেখা যায় অনেক বাসিন্দাকে। জমিতে তেমন ফসল না থাকলেও এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পুকুর ও হ্যাচারির খামারিরা।

পরশুরামের উত্তর ধনীকুন্ডায় মুহুরী নদীর ভাঙনে ঘর হারানো বিমল দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আকস্মিক বন্যায় আমার ঘর পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। পরিবার নিয়ে অন্য জায়গায় থাকছি। ঘর মেরামত করে দিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সাহায্য চেয়েছি।’

জানতে চাইলে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত চার দিনের বন্যায় ফেনীতে ৫ উপজেলায় ৩৪ হাজার ৬০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এখন অনেকের বাড়ি থেকে পানি নেমেছে। গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেছেন ৫ হাজার ১৮ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ৫ উপজেলায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।

বন্যায় ধসে পড়েছে একটি ঘর। ফেনীর পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামে

বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ উপদেষ্টা

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুহুরী নদীর ভাঙনকবলিত উত্তর শ্রীপুর গ্রামের নাপিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক-ই–আজম। এ সময় তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর দ্রুত মেরামত করার আশ্বাস দেন।

এর আগে শুক্রবার রাতে ফেনী সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভায় অতিথির বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ফেনী সেনাক্যাম্প ইনচার্জ ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহিম মোনায়েম হোসেন, বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, ফেনী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রমুখ।