বান্দরবানে বর্ষবরণ আজ থেকে রূপ নিয়েছে বৈচিত্র্যের মেলায়
বান্দরবানে পাহাড়িদের বর্ষবিদায় ও বরণের ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যের মেলায় পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার মারমা, ম্রো, খেয়াং, খুমি ও চাক—এই পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের ফুলবিজু ছিল, আজ তাদের মূলবিজু। এই বহু জাতিগোষ্ঠীর চার দিনব্যাপী উৎসব ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
বৈসাবি উৎসবে আজ মারমা ও চাকদের পাইনশোয়ে বা ফুলসাংগ্রাইংয়ের মধ্য দিয়ে সাংগ্রাইং উৎসবের শুরু। একইভাবে ম্রোদের চাংক্রান, খুমিদের সাংগ্রাং ও খেয়াংদের সাংলান উৎসবও আজ শুরু হয়েছে। উৎসব উপলক্ষে সকাল সাড়ে আটটায় জেলা শহরের রাজার মাঠ থেকে আয়োজন করা হয় হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। পাঁচ জনগোষ্ঠীর উৎসব শুরুর মঙ্গলা শোভাযাত্রায় চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরাসহ আরও অন্যান্য জনগোষ্ঠীও ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশগ্রহণ করে।
Also Read: নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় আজ ‘ফুলবিজু’
সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাজার মাঠ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য আসেন হাজারো নারী-পুরুষ। মারমা, চাকমা, ম্রো, ত্রিপুরা, খুমি, খেয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, চাকসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নিজেদের স্বতন্ত্র উৎসবের পোশাকে, ঐতিহ্য প্রদর্শনের প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে এসেছেন।
সকাল সাড়ে আটটায় মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা ও পৌরসভার মেয়র শামসুল ইসলাম।
Also Read: পাড়ায় পাড়ায় গরাইয়া নাচে বৈসু উৎসবের আগমনী
মঙ্গল শোভাযাত্রায় আসা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক কর্মী ক্যসামং মারমা বলেন, প্রত্যেক পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী নিজেদের স্বতন্ত্র ভাবধারা ও ঐতিহ্যে বৈসাবির বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসু, চাংক্রান, সাংলান, চাংগ্রাং উৎসব উদ্যাপন করে। এ জন্য বৈসাবি উৎসবকে বহু জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবের মেলা বলা যেতে পারে।
ম্রো ভাষার লেখক ও জেলা পরিষদের সদস্য সিংইয়ং ম্রো বলেন, ম্রোদের চাংক্রান, খেয়াংদের সাংলান, মারমাদের সাংগ্রাইং উৎসব উদ্যাপনে প্রত্যেকের আলাদা ভাবধারা আছে। ম্রোরা চাংক্রানে মেলার আয়োজন করে। নতুন বছরের জন্য শুভকামনা করে নানা পূজাপার্বণ করে থাকে।
Also Read: পাহাড়ের বৈসাবির আয়োজন রাজধানীতে
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক মং নু চিং মারমা বলেছেন, মারমা বর্ষপঞ্জি সাকক্রয় অনুযায়ী পাইনশোয়ে (ফুলসাংগ্রাইং) হচ্ছে প্রাক্-সাংগ্রাইং। পাইনশোয়ে দিনে সব ভুলত্রুটি ক্ষমা চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজা করা হয়। কাল রোববার মূল সাংগ্রাইংয়ে বুদ্ধমূর্তি স্নান ও পিঠা উৎসব হবে। আগামী সোম ও মঙ্গলবার মৈত্রী পানিবর্ষণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে।
এদিকে চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের আজ মূলবিজু, মূলবিষু ও মূলবৈসু। ঘরে ঘরে পাঁচন (কমপক্ষে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ২০-২৫ ধরনের সবজির রান্না) ও ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পায়েস রান্না করা হয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস, কমপক্ষে পাঁচটি বাড়ি ঘুরে পাঁচন খেলে রোগব্যাধির প্রতিরোধক্ষমতা জন্মে এবং সারা বছর সুস্থ থাকা যায়। কাল চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের উৎসবের শেষ দিন।