শরীয়তপুরের পালং বাজারের হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে প্রতি কেজি রসগোল্লা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়
শরীয়তপুরের পালং বাজারের হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে প্রতি কেজি রসগোল্লা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়

শরীয়তপুরের যে মিষ্টির সুনাম ৭৫ বছর ধরে

শরীয়তপুর জেলা শহরের পালং বাজারে ১৯৫০ সালে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন সচিনাথ ঘোষ। শুরুতে তিনি রসগোল্লা তৈরিতে বিশেষ মনোযোগ দেন। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় সেই রসগোল্লার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বাড়তে থাকে চাহিদা। পাল্লা দিয়ে বিক্রিও বাড়ে। সেই ধারা অব্যাহত আছে ৭৫ বছর ধরে।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। তখন শরীয়তপুর নামকরণ করা হয়। এর আগে নাম ছিল পালং। সেই পালং বাজারে তিন ছেলে রঙ্গলাল ঘোষ, নারায়ণ ঘোষ ও হারু ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে মিষ্টির ব্যবসা চালাতেন সচিনাথ ঘোষ। ১৯৭২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তিন ছেলে আলাদা করে পালং বাজারে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। ছোট ছেলে হারু ঘোষ ১৯৭৪ সালে বাজারের উত্তর প্রান্তে বাবার রেখে যাওয়া দোকানের হাল ধরেন। দোকানটির নামও হয়ে যায় হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার।

দোকানটিতে প্রতিদিন ৩০০ কেজি দুধের মিষ্টি বানানো হয়। প্রতিদিন রসগোল্লা ছাড়াও সন্দেশ, রসমালাই, লালমোহনসহ অন্তত ১০ ধরনের মিষ্টি বিক্রি করা হয়। এর বাইরে তাঁরা ঘি ও দইও বিক্রি করেন। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়। বিক্রয়মূল্য ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা।

হারু ঘোষের বয়স এখন ৮০ বছর। তাঁর দোকানের বিশেষ রসগোল্লা ১৯৭৪ সাল থেকে তিনিই বানাতেন। অসুস্থতার কারণে পাঁচ বছর ধরে তিনি আর মিষ্টি বানাতে পারেন না। দোকানের এক কর্মী হারু ঘোষের প্রণালিতে এখন সেই মিষ্টি বানান। তদারকি করেন হারু ঘোষ। তাঁকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করেন ছেলে সুমন ঘোষ।

শরীয়তপুরের পালং বাজারের হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে প্রতিদিন রসগোল্লা, সন্দেশ, রসমালাই, লালমোহনসহ অন্তত ১০ ধরনের মিষ্টি বিক্রি করা হয়

সুমন ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দোকানে যত মিষ্টি বিক্রি হয়, তার ৮০ শতাংশই রসগোল্লা। দুধ সংগ্রহ, দুধ থেকে ছানা বানানো, ছানা থেকে রসগোল্লা বানানোর জন্য ছয়জন কর্মী কাজ করেন। দুধ ও চিনির দাম বাড়ায় এখন আর তেমন ব্যবসা হচ্ছে না। সুনামের জন্য ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। প্রতি কেজি রসগোল্লা এখন ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছি।’

শরীয়তপুরের পালং বাজারের হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়

পালং এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্যাম সুন্দর দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, শিশু বয়স থেকে তাঁরা সচিনাথ ঘোষের সুস্বাদু রসগোল্লার সঙ্গে পরিচিত। সেই মিষ্টির ব্যবসা এখন তাঁর ছেলে হারু ঘোষ করছেন। দিন দিন তিনি সুনাম বাড়িয়েছেন। স্বাদ ও মানের কারণে এখনকার প্রজন্মও তাঁর দোকানের রসগোল্লা অনেক পছন্দ করেন। এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে কিংবা অতিথি আপ্যায়নের জন্য হারু ঘোষের রসগোল্লা থাকবেই। অনেকে বিশেষ কোনো দিনে বা অনুষ্ঠানে আত্মীয়দের বাড়িতে এই মিষ্টি পাঠান।

শরীয়তপুরের পালং বাজারের হারু ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের যাত্রা শুরু ১৯৫০ সালে। এখানকার মিষ্টির সুনাম ৭৫ বছর ধরে

হারু ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার ব্যবসা আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। আমি বাবার হাতের তৈরি রসগোল্লার স্বাদ ও মান ধরে রাখতে মন দিই। এখন ওই রসগোল্লা আমার নামে হারু ঘোষের রসগোল্লা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নিজেই বানাতাম, এখন আর পারি না। স্বাদ ও মান বজায় রাখার তদারকি করি। জানি না, এভাবে কত দিন চালিয়ে যেতে পারব!’