প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে নওগাঁয় গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিকর্মীদের মানববন্ধন। আজ সোমবার দুপুরে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকায়
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে নওগাঁয় গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিকর্মীদের মানববন্ধন। আজ সোমবার দুপুরে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকায়

‘হামলায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধ হয়নি, ভবিষ্যতেও বন্ধ করা যাবে না’

দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদে আজ সোমবার নওগাঁ, পটুয়াখালীর বাউফল, গাজীপুর, শরীয়তপুর, কক্সবাজার ও নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুর ও টাঙ্গাইলে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন।

কর্মসূচিগুলো থেকে হামলাকারীদের প্রতিরোধ ও বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য টার্গেট করে সংবাদপত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। এমন হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। এটি ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতার জন্য অশনিসংকেত। এখনই এ ধরনের অপশক্তিকে প্রতিহত না করা গেলে গোটা গণমাধ্যমজগৎ অস্তিত্বসংকটে পড়বে।

নওগাঁ

আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের মুক্তির মোড়ে নওগাঁ সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রথম আলো বন্ধুসভা নওগাঁর ব্যানারে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন থেকে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান অংশগ্রহণকারীরা।

মানববন্ধনে নওগাঁ থেকে প্রকাশিত দৈনিক বরেন্দ্রকণ্ঠের সম্পাদক ও নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম আলোকে সরকারি দপ্তরে নিষিদ্ধ করেছিল। অথচ একটি উগ্র গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে মব সৃষ্টি করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অফিসে হামলা চালিয়েছে। এ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক করতোয়ার জেলা প্রতিনিধি নবির উদ্দিন বলেন, সংবাদপত্র হলো একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদই একটি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রধান ভিত্তি। অথচ একটি অশুভ শক্তি পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা কমান্ড কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটি গোষ্ঠী চায় না দেশে নির্বাচন হোক। দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাক। তারা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগতভাবে অপমান করার দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে। প্রগতিশীল সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সরকারকে এসব কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও চ্যানেল আইয়ের নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি কায়েস উদ্দিন, নওগাঁ জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান, নওগাঁ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আজাদ হোসেন, নওগাঁ সাংস্কৃতিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক মাগফুরুল হাসান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রায়হান বাহাদুর প্রমুখ।

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আক্রমণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটুয়াখালীর বাউফল প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে

পটুয়াখালী

বাউফল প্রেসক্লাবের আয়োজনে আজ বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের বীর উত্তম সামসুল আলম তালুকদার ভবনের সামনের সড়কে এক ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।

বাউফল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বাউফল প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ও ভোরের কাগজের প্রতিনিধি অতুল চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক ও মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি মো. জসিম উদ্দিন, সমকালের প্রতিনিধি জিতেন্দ্র নাথ রায়, ইত্তেফাকের প্রতিনিধি কৃষ্ণ কান্ত কর্মকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মাইটিভির প্রতিনিধি অহিদুজ্জামান, ইনকিলাবের প্রতিনিধি নূরুল ইসলাম ছিদ্দিকী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মো. অলিয়ার রহমান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বাউফল উপজেলা শাখার সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার, বাউফল মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক অহিদুজ্জামান, বাউফল পৌরসভা বস্ত্র সমিতির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য তরিকুল ইসলাম, জুয়েলারি সমিতির বাউফল পৌরসভা শাখার সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুমার দাস প্রমুখ।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম বলেন, সংবাদমাধ্যম হলো আলো। আলো কখনো পোড়ে না, পোড়ানো যায় না। আগুনে আলো আলোকিত হয় বহুগুণে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সেই আলো, আগুনের আলো হয়ে ফিরেছে সবার মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিতে।

অতুল চন্দ্র পাল বলেন, ‘সংবাদপত্রের কারণে যেকোনো সরকার স্বৈরাচার হতে ভয় পায়। গণতন্ত্র টিকে থাকে সংবাদপত্রের কারণে। সেখানে শীর্ষ সংবাদপত্র প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর আক্রমণ স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হুমকিস্বরূপ। এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যাবে না।’

জামালপুর

এ ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে প্রেসক্লাব জামালপুর। সংগঠনের সভাপতি মুখলেছুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ ও তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশের মতো আমরাও গভীরভাবে শোকাহত। যখন সারা দেশ শোকাহত, তখন একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক ও জঘন্যতম তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা পত্রিকা দুটির কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করে। একই সঙ্গে উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি কার্যালয় দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অতীতে সংবাদমাধ্যমে বহু হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এ ধরনের সংগঠিত ও সহিংস আক্রমণ দেখা যায়নি কখনো। এই নজিরবিহীন তাণ্ডব পুরো সাংবাদিক সমাজকে আঘাত করেছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, আমরা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও লক্ষ করেছি। দেশের জনপ্রিয় পত্রিকার কার্যালয় দুটিতে নজিরবিহীন তাণ্ডব চললেও তাদের কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যায়নি।’

সাংবাদিক নেতারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। সাংবাদিক, সম্পাদকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের একটি মৌলিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ বন্ধের অপচেষ্টা পুরো সমাজের জন্য অশনিসংকেত। অবিলম্বে শরিফ ওসমান হাদির হত্যা, প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ একই সঙ্গে তাঁরা সাংবাদিক, গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গাজীপুরের শ্রীপুরে সাংবাদিকদের মানববন্ধন। আজ বেলা একটার দিকে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সামনে

গাজীপুর

আজ বেলা একটার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। শ্রীপুর প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও দৈনিক দিনকালের শ্রীপুর প্রতিনিধি বশির আহমেদ কাজলের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা সঞ্চালনা করেন দৈনিক আজকের পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি রাতুল মণ্ডল।

সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের ওপর হামলার মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা কোনো দিন সফল হবে না। হামলায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধ হয়নি, ভবিষ্যতেও বন্ধ করা যাবে না।

সভাপতির বক্তব্যে বশির আহমেদ কাজল বলেন, বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র ও তথ্যভিত্তিক সত্য জানতে হলে সাংবাদিকদের চোখ দিয়েই দেখতে হবে। সাংবাদিকদের ধ্বংস করার চেষ্টা অতীতেও সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তিনি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং সাংবাদিকদের পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান।

দৈনিক কালের কণ্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি শাহীন আকন্দ বলেন, এই হামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত। সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রথম আলো শ্রীপুর প্রতিনিধি সাদিক মৃধা, ডেইলি স্টারের গাজীপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক মঞ্জুরুল হক, চ্যানেল নাইনের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম, এশিয়ান টেলিভিশনের শ্রীপুর প্রতিনিধি কবির সরকার, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস সালাম, দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মাহবুবুর রহমান, এনটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি আব্দুর রউফ এবং পরিবেশবিষয়ক সংগঠন রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খুরশেদ আলম।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিটিভির শ্রীপুর প্রতিনিধি মোতাহার খান, দৈনিক ভোরের চেতনার শফিকুল ইসলাম, দেশ রূপান্তরের রেজাউল করিম, দৈনিক সময়ের আলোর শ্রীপুর প্রতিনিধি মেহেদী হাসান, দৈনিক কালবেলার সুমন শেখ, দৈনিক দেশের কণ্ঠ পত্রিকার ওয়াসিম আকরাম, দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার আশরাফুল ইসলাম, চ্যানেল-১৮–এর সোলাইমান মোহাম্মদ, এশিয়ান টিভির সুমন গাজী, চ্যানেল এসের মো. কাওসার, দৈনিক চিত্রর কবির হোসেন, সাংবাদিক আব্দুল আজিজ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

টাঙ্গাইল

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রিন্ট মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন টাঙ্গাইল। সোমবার সংগঠনটির সভাপতি জোবায়ের মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক আবু জোবায়ের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে প্রিন্ট মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, এ ধরনের হামলা শুধু স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলা নয়। দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি চরম হুমকি। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানানো হয়।

কক্সবাজার

বিকেলে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত এক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার, ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট এবং প্রগতিশীল সংগঠন উদীচীর ওপর হামলা করে বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। সমাবেশে কক্সবাজার জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক সৌরভ দেব বলেন, ‘অন্য দেশের নাম নিয়ে নিজের দেশের সহনাগরিকদের ওপর হামলা করছেন আপনারা। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আপনাদেরই নাগরিকদের গড়ে তোলা। এসব ঘটনায় বিশ্বের কাছে মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের।’

কক্সবাজারের ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে গান, কবিতা ও নৃত্যের মাধ্যমে জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যা, ময়মনসিংহে দীপু ও শিশু আয়েশাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা, পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মনির মোবারকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সাইফুল, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক রাজিব কর্মকার, খেলাঘর সংগঠক কলিম উল্লাহ প্রমুখ।

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা এবং খুলনায় সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলন হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় প্রতিবাদ সমাবেশ। আজ দুপুরে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সামনে

নারায়ণগঞ্জ

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা ও অগ্নিসংযোগ এবং খুলনায় সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলন হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ফতুল্লা প্রেসক্লাব। আজ দুপুরে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখায় ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়েছিল। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও একটি গোষ্ঠী এ দুটি গণমাধ্যমকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে হামলা চালিয়েছে। তিনি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. মাসুম, সহসভাপতি সেলিম মুন্সী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলামিন প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ. আলিম লিটন, প্রচার সম্পাদক সেলিম হোসেন, দপ্তর সম্পাদক এম এ সুমন, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার সৌরভ হোসেনসহ স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফতুল্লা মডেল থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়।

শরীয়তপুর

শরীয়তপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে সোমবার বিকেলে জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচিতে জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বাসসের প্রতিনিধি মজিবুর রহমান, আরটিভি প্রতিনিধি আবুল হোসেন সরদার, সংগ্রাম প্রতিনিধি কে এম মকবুল হোসাইন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক নুরুল আমীন, একুশে টিভি ও জনকণ্ঠের প্রতিনিধি আবুল বাশর, মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি খালেদ সাইফুল্লাহ, ডিবিসি টিভির প্রতিনিধি রাজিব হোসেন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির।

মজিবুর রহমান বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর হামলা করা মানে সাংবাদিক সমাজকে ভয় দেখানো। দেশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে কোনো চক্র এটা করেছে। একটি মহল জানে, স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করতে পারলে তাদের জন্য ভালো হয়। কিন্তু তা হবে না, সারা দেশের সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ। আবুল হোসেন বলেন, এখন নির্বাচনী সময়। নির্বাচন বানচাল করতে কোনো পক্ষ এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে। কে এম মকবুল হোসাইন বলেন, সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা করা বন্ধ করতে হবে। এমন ঘটনা যাতে দেশে আর না ঘটে, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। নুরুল আমীন বলেন, গণমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ইট–পাথরের অবকাঠামোতে আঘাত করলেই স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতাকে বন্ধ করা যাবে না। আবুল বাশর বলেন, সব সময়ই সংবাদমাধ্যমকে টার্গেট করা হয়। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার দেশের শীর্ষ পত্রিকা। ইমরান আল নাজির বলেন, ‘প্রথম আলোর যদি কোনো ভুল থাকত, তা তুলে ধরা যেত। কিন্তু কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠান দুটিতে হামলা করা হবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।’

[প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার এবং প্রতিনিধি, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, শরীয়তপুর, গাজীপুরের শ্রীপুর ও পটুয়াখালীর বাউফল]