বাঁ হাতের কবজি না থাকলেও যশোরের আসাদুজ্জামান এক হাতে বাইসাইকেল চালিয়ে ঘরে ঘরে পত্রিকা পৌঁছে দেন। গতকাল বুধবার দুপুরে যশোর শহরের জেল সড়কের ঘোপ এলাকায়
বাঁ হাতের কবজি না থাকলেও যশোরের আসাদুজ্জামান এক হাতে বাইসাইকেল চালিয়ে ঘরে ঘরে পত্রিকা পৌঁছে দেন। গতকাল বুধবার দুপুরে যশোর শহরের জেল সড়কের ঘোপ এলাকায়

এক হাতের কবজি হারিয়েও সাইকেল চালিয়ে পত্রিকা বিলি করেন যশোরের আসাদুজ্জামান

৫৭ বছর বয়সী আসাদুজ্জামানের বাঁ হাতের কবজি নেই। তবু প্রতিদিন ভোরে খবরের কাগজ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। ডান হাতে শক্ত করে ধরেন বাইসাইকেলের একটি হ্যান্ডেল আর কবজি কাটা বাঁ হাতটি রাখেন আরেক হ্যান্ডেলে। এভাবেই রোদ–বৃষ্টি–ঝড় উপেক্ষা করে মানুষের ঘরে ঘরে পত্রিকা পৌঁছে দেন তিনি।

পানির মোটর মেরামতের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩০ বছর আগে বাঁ হাতের কবজি হারিয়েছিলেন যশোরের আসাদুজ্জামান। তখন তিনি যশোর পৌরসভার অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন। কবজি হারানোর পর এককালীন লাখ দেড়েক টাকা দিয়ে আসাদুজ্জামানকে চাকরি থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে একটি ছোট মুদিদোকান দেন তিনি। পরে দোকানটি তাঁর একমাত্র ছেলেকে দিয়ে দেন। ছয় বছর ধরে বাইসাইকেল চালিয়ে পত্রিকা বিক্রির কাজ করছেন তিনি।

আসাদুজ্জামানের দুই ছেলেমেয়ে। তাঁদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে আলাদা সংসারে থাকেন। আসাদুজ্জামান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নিজের রোজগারে সংসার চালান। ছেলের স্বল্প আয়ে কোনো রকমে ছেলের সংসার চলে। আসাদুজ্জামানের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার আর তেমন কিছু নেই। যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকায় আড়াই শতাংশ জমির ওপরে তাঁর বসতবাড়ি। ছাপা পত্রিকা বিক্রি কমে যাওয়ায় তিনিও বিপাকে পড়েছেন। প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি করে যে সামান্য আয় হয়, তাতেই চলে যায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের সংসার।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পত্রিকা বিক্রি করে বেশ তো জীবন চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন ২০০–৩০০ টাকা আয় হয়। স্বল্প মূল্যে সরকারি ওএমএস ও টিসিবির কার্ডে চাল-ডাল-তেল-আটা কিনি। এভাবেই সংসার চলে যায়। তবে পাশাপাশি বসে থেকে হিসাব–নিকাশের কোনো কাজ পেলে ভালো হতো।’

আসাদুজ্জামান যশোর সরকারি সিটি কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দিলেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তিনি তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মেয়েকে স্নাতকোত্তর পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। যদিও একমাত্র ছেলে স্নাতক শেষ করতে পারেননি। ছেলে এখন তাঁর সেই ছোট মুদিদোকানটি চালান।

বাণিজ্য বিভাগ থেকে লেখাপড়া করে দাপ্তরিক কোনো কাজ না করে এত পরিশ্রমের কাজ করছেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শহরের একটি দোকানে হিসাব–নিকাশের চাকরির জন্য কয়দিন হাঁটাহাঁটি করেছিলাম। ওই দোকানের মালিক কয়েক দিন ঘুরিয়েছে আমাকে। এরপরে আমি আর চেষ্টা করিনি। তাই নিজের স্বাধীন ব্যবসা সংবাদপত্র বিক্রির কাজ বেছে নিলাম। এই কাজটা আমি ছাড়তে চাই না। পাশাপাশি কোনো কাজ পেলে হয়তো করতে পারি।’

যশোর সংবাদপত্র হকার্স ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতা ওলিয়ার রহমান বলেন, আসাদুজ্জামান খুবই বিনয়ী ও সজ্জন ব্যক্তি। অনেক সংগ্রাম করে এক হাতে বাইসাইকেল চালিয়ে সংবাদপত্র বিক্রির কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।