
সাফল্যের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে গতকাল শনিবার মুখর হয়ে উঠল গাইবান্ধার ইনডোর স্টেডিয়াম। সকাল নয়টায় শিক্ষার্থীদের আসার কথা থাকলেও সাড়ে আটটা থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে। নানা আয়োজনে গতকাল গাইবান্ধার ওই ইনডোর স্টেডিয়ামে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শামছুল হক বলেন, ‘আমাদের সমাজে ভালো মানুষের অভাব রয়েছে। তোমাদের সুশৃঙ্খল ও নৈতিক হতে হবে।’
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলোর আয়োজনে ওই অনুষ্ঠান হয়। একইভাবে কুমিল্লা ও যশোরে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। ২০২৫ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ৬৪ জেলায় পর্যায়ক্রমে এ সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।
কুমিল্লা
কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে বন্ধুসভার বন্ধু ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একপর্যায়ে বন্ধুসভার সদস্য উপস্থাপক ফারজানা নিশাত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মঞ্চে ডাকেন। তারা কেউ গান, কেউ কবিতা, কেউ নৃত্য পরিবেশন করে।
বক্তব্য দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. হায়দার আলী, কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামসুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাফিজ প্রমুখ।
উপাচার্য হায়দার আলী বলেন, কৃতী শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল নয়, সততা, নিষ্ঠা ও মানবিক মূল্যবোধে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
অধ্যাপক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘প্রযুক্তির এ বিশ্বে তোমাদের আপডেট থাকতে হবে। জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে হবে।’
প্রথম আলোর আঞ্চলিক সংবাদবিষয়ক সম্পাদক তুহিন সাইফুল্লাহ শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, মুখস্থবিদ্যা ও মাদকের বিরুদ্ধে শপথবাক্য পাঠ করান।
প্রথম আলোর হেড অব কালচারাল ইভেন্ট ও দেশের জনপ্রিয় গীতিকার কবির বকুল বলেন, ‘তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে আগামীর বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠানে শিল্পী মিঠুন রায়ের গান শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে তোলে। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান। তিনি প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান কুমিল্লা বন্ধুসভার সভাপতি ও কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন। অনলাইন কুইজ বিজয়ী ১১ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
গাইবান্ধা
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিন ‘ম’—মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে না বলার শপথবাক্য পাঠ করান প্রথম আলোর সাবেক সহসম্পাদক শিক্ষক আলমগীর খন্দকার।
রোকেয়া পদক প্রতিযোগিতায় ‘সফল জননী’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ হওয়া রাবেয়া খাতুন বলেন, মায়ের মুখ উজ্জ্বল করা মানেই দেশের মুখ উজ্জ্বল করা।
শিখোর ম্যাথ মেন্টর সৌরভ সাহা বলেন, এখন অনলাইনের যুগে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সেরা শিক্ষকের ক্লাস পাওয়া সম্ভব।
সাংস্কৃতিক পর্বে গান পরিবেশন করেন গাইবান্ধা বন্ধুসভার উপদেষ্টা নিগার নাঈম ও জিয়াউর রহমান, স্বজন খন্দকার এবং কৃতী শিক্ষার্থী সিনহা কবির, মেঘা ও নিরব আহমেদ। সবশেষে কুইজ বিজয়ী ১০ জনের হাতে বই তুলে দেন অতিথিরা।
যশোর
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সকাল সাড়ে ১০টায় মঞ্চে আসেন উপস্থাপক ও বন্ধুসভার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম (যাদু)। শুরুতে প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম নানা পরামর্শ দেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ‘মিথ্যা, মাদক ও মুখস্থকে না বলি’ শপথ পাঠ করান।
বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে সংগ্রামের গল্প শোনান জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাইক্লিংয়ে নারীদের মধ্যে দেশসেরা প্রিয়া খাতুন। শিখোর দুজন প্রতিনিধি কামরুল হাসান শাহেদিন ও তাসফিকাল সামি মঞ্চে আলোচনা করেন এবং কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখেন।
আলোচনার ফাঁকে চলে বন্ধুসভার বন্ধু ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠন নৃত্য বিতানের শিল্পীরা। সংগীত পরিবেশন করেন চ্যানেল আইয়ের সেরা কণ্ঠ ইমরান খন্দকার।