
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় অবস্থিত রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর রিসোর্টের মালিক অভিযোগ করেছেন, গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর একটি পক্ষ তাঁদের কাছে একাধিকবার চাঁদা চাইতে গিয়েছিল। ওই পক্ষটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত।
গতকাল রোববার দুপুরে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার কয়েক শ ব্যক্তি। এ সময় রিসোর্টে অবস্থান করা ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করেন তাঁরা। পরে ওই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আটজনকে অভিভাবক ডেকে বিয়ে দেন। অন্যদের অভিভাবকদের জিম্মায় সামাজিকভাবে বিয়ের আয়োজন করার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন।
গতকাল রাত ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল উদ্দিন। এ সময় স্থানীয় লোকজন রিসোর্টের মূল ফটকে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে যান। পকেট গেটের তালার চাবি মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আরও কয়েক দিন পর এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন আবার মালিকের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে স্থানীয় লোকজন এককভাবে তাঁদের দোষারোপ করেছেন। গতকালের ঘটনাটি সন্দেহজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত রিসোর্টে এত অতিথি থাকেন না। বিষয়টি কিছুটা সাজানোও হতে পারে। যদিও আমরা শতভাগ নির্দোষ, সেটিও দাবি করছি না।’
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হামলায় আমাদের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কিছু মালামাল নিয়ে গেছেন হামলাকারীরা। রিসোর্টে থাকা “অ্যান্টিক” কিছু মালামালও নিয়ে গেছেন। আগুন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে। রিসোর্টের অতিথিদের তালিকাতেও আগুন দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে স্থানীয় যুবকেরা গতকাল দুপুরে পার্কে প্রবেশ করেন। এ সময় পার্ক ও রিসোর্টের কক্ষে অবস্থান করা ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করেন তাঁরা। স্থানীয় লোকজন পার্কের বিভিন্ন আসবাব ও দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে রিসোর্টের একটি অংশে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনের খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমার ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও মোগলাবাজার থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর স্থানীয় মুরব্বি, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে আটক ১৬ তরুণ-তরুণীর অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়। পরে আটক তরুণ-তরুণীর মধ্যে আট তরুণ-তরুণীকে বিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়।
প্রায় ১১ বছর ধরে রিসোর্ট পরিচালনা করছেন জানিয়ে মালিক হেলাল উদ্দিন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা পরিচয়ে বিভিন্ন আয়োজনে রিসোর্ট ভাড়া নিতেন কয়েকজন। কিন্তু টাকাপয়সা ঠিকমতো দিতেন না। ৫ আগস্টের পর রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চাঁদা হিসেবে টাকা চাওয়া হয়েছে। চাঁদা দাবিকারীরা বলতেন, ‘আমরা ভালো ব্যবসা করছি, তাঁদের যাতে ব্যবসায় অংশীদার করি।’ চাঁদা দাবি করা ব্যক্তিরা রাজনৈতিক দলের কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলেরই। তবে ভবিষ্যতে ‘ঝামেলা এড়াতে’ তাঁরা কোন দলের, সেটি বলতে চাননি তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে রিসোর্টের মালিকের সঙ্গে এলাকাবাসীর বৈঠক হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তার স্বার্থে রিসোর্টের মূল ফটকে তালা দিয়ে এলাকার মুরব্বিদের কাছে চাবি রাখা হয়েছে। ছোট গেটের চাবি তাঁদের (মালিক) দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন পর আরও একটি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মালিকপক্ষের অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় কেউ মালামাল নিয়ে যাননি। যেটি অভিযোগ করা হচ্ছে, টাকাপয়সা চাওয়া হয়েছে, নাম-পরিচয় প্রকাশ করলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আট তরুণ-তরুণীকে বিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে এই বিএনপি নেতা বলেন, পাত্র-পাত্রী ও দুই পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতিতেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। চারটি বিয়ের মধ্যে তিনটি ১০ লাখ টাকার কাবিন এবং একটির ১২ লাখ টাকার কাবিন করা হয়েছে। অন্যদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পরবর্তী সময়ে সামাজিকভাবে বিয়ের আয়োজন করবেন বলে জানিয়েছেন। এ সময় মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রিসোর্টের বিষয় নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।