
পটুয়াখালীর বাউফলে ১০ বছর আগের একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ (৫২) ও মদনপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমানসহ (৫০) চার আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে ১০ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে (৯ ও ৬ বছর) সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া চার আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের ১ মে বিকেল ৪টার দিকে বাউফলের মদনপুরা গ্রামের মো. মোসলেম মৃধার ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম ওরফে শাহিনকে (৪০) প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনার তিন দিন পর ৪ মে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আমলি আদালতে ৩২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন মোসলেম উদ্দিন মৃধা। নিহত মনিরুল ছিলেন মদনপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ও ওষুধ ব্যবসায়ী।
ওই হত্যাচেষ্টার ৯ বছর ৩ মাস পর গত বছরের ৫ আগস্ট ঘরে ঢুকে যুবলীগ নেতা মনিরুলের ওপর আবার হামলা করে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এদিন মনিরুলের বাবা মোসলেম উদ্দিন মৃধাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে দুই পা ও দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত ৪ ডিসেম্বর একই আদালতে পৃথক একটি হত্যা মামলা হয়েছে, যেটি বিচারাধীন। এই হত্যা মামলার অধিকাংশ আসামি ১০ বছর আগের হত্যাচেষ্টা মামলারও আসামি।
১০ বছর আগের মনিরুলকে হত্যাচেষ্টার মামলায় পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কে এম এনামুল করিম গতকাল মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় ১৮ আসামির মধ্যে ১৫ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন, তিনজন পলাতক। তাঁরা হলেন ১ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান (১০ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত), ২ নম্বর আসামি যুবলীগ নেতা শাহজাহান সিরাজ এবং ৩ নম্বর আসামি মো. রফিজ মৃধা (৪০)। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আদালতে উপস্থিত দণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি আইনজীবী মো. ফরিদ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মামলাটি বাউফল থানা-পুলিশ তদন্ত করে ১১ জনের নাম বাদ দিয়ে ২১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদী মোসলেম উদ্দিন আপত্তি জানালে আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। পিবিআই ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল ৩২ জনের নামেই অভিযোগপত্র দাখিল করে। ওই অভিযোগপত্রের ওপর দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ১৮ জনের নামে অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু করেন। মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় বাদী মোসলেম উদ্দিন মৃধা আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা ২০১৫ সালের ১ মে তাঁর ছেলে মনিরুলকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ‘মব’ সৃষ্টি করে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তাঁকেও (মোসলেম) পিটিয়ে ও কুপিয়ে দুই পা ও দুই হাত ভেঙে দিয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় মনিরুলকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। মোসলেম উদ্দিন বলেন, দুই ঘটনাতেই তিনি মামলা করেছেন; কিন্তু সন্ত্রাসীদের ভয়ে তিনি ও পরিবারের সদস্যরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। তিনি তাঁর ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান।