পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বুধবার বিকেলে রংপুর নগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে
পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বুধবার বিকেলে রংপুর নগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে

৮ দলের সমাবেশে চরমোনাই পীর

একশ্রেণির ক্ষমতালোভীরা ক্ষমতায় যেতে ‘ডাবল পাগল’ হয়ে গেছে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘আজকে রংপুর থেকে আওয়াজ তুলতে হবে, আবু সাঈদ যেভাবে হাত প্রসারিত করে আমাদের দেশকে আবার স্বাধীনতার পরিবেশ তৈরি করেছিলেন; এই রংপুর থেকে এই চাঁদাবাজদের, ক্ষমতালোভীদের এবং যারা বিদেশের তাঁবেদারি আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করতে চায়, তাদের না বলে বাংলার জমিন থেকে উৎখাত করতে হবে।’

আজ বুধবার বিকেলে রংপুর নগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া, দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদের উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন, গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আলাদাভাবে করাসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে এই আট দল।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘আজকে সারা দেশের মানুষ, দিন, রাত, সপ্তাহ, বছর গুনছে, কবে নির্বাচনের বাক্স আসবে। আট দল অর্থাৎ ইসলামের পক্ষে, মানবতার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষার দিন গুনছে। আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, এ দেশ আমার, এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছি আমি। এ দেশকে নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলতে চায়, এ দেশের টাকা যারা বিদেশে পাচার করতে চায়, যারা মায়ের কোল সন্তানহারা করতে চায়, আপনাদের বারবার বলছি, আগের মতো গুন্ডা ও জাল টাকার দৌরাত্ম্যকারীদের আট দল উৎখাত করবে ও ইসলামের জয় হবে।’

আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে দলগুলোর নেতা–কর্মীরা। বুধবার বিকেলে রংপুর নগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে

সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম আরও বলেন, ‘আজকে দুঃখ হয়, এতগুলো মায়ের কোল সন্তানহারা হলো, এত মানুষ পঙ্গু ও চোখ হারাল, আমাদের যে মৌলিক দাবিগুলো ছিল, দেশের মৌলিক সংস্কার হবে, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দৃশ্যমান বিচার হবে। এরপর জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, একশ্রেণির ক্ষমতালোভীরা সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারকে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু পাগল নয়, ডাবল পাগল হয়ে গেছে।’

চরমোনাই পীর আরও বলেন, ‘সেদিন, সে সময় ভুলে যান, আজকে বাংলাদেশ যারা ভালোবাসে, যারা ইসলামকে ভালোবাসে, যারা মানবতার কল্যাণ রক্ষার জন্য চেষ্টা করে, তারা রাজপথে চলে এসেছে। আজকে ক্ষমতাপ্রেমীদের বলব, আপনারা বারবার ক্ষমতায় গিয়েছিলেন, আমাদের কী উপহার দিয়েছিলেন। নতুনভাবে পুরোনো বউ নতুন শাড়িতে আমাদের ধোঁকা দিতে পারবে না। ধোঁকা দেওয়ার দিন শেষ। দেশ রক্ষার জন্য রাজপথে আমরা উপস্থিত হয়েছি।’

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, বিগত ৫৪ বছর যাদের ক্ষমতায় দেখা গেছে, তারা দুর্নীতির পাহাড় গড়েছে। সাড়ে ১৫ বছরে লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সৎ নেতৃত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রে কায়েম হলে, বাংলাদেশ পাঁচ বছরের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত হলে সিঙ্গাপুরের মতো নয়, তার থেকেও অনেক উন্নত বাংলাদেশ হতে পারবে।

আগামী নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে সারা বাংলাদেশে আট দলের নেতৃবৃন্দের সফরের মাধ্যমে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে জনগণ ইসলামপন্থী দেশপ্রেমিক শক্তিকে বাছাই করে নেবে।’

বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলে দলে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন আট দলের নেতা-কর্মীরা। বেলা সোয়া দুইটার হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ শুরু করা হয়।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দুনিয়ায় কল্যাণ করতে চাই। আখিরাতেও কল্যাণ পেতে চাই। সেই আখিরাতের কল্যাণের জন্য আবু সাঈদের মতো, মুগ্ধর মতো জীবন বিলিয়ে দিতে হবে।’

দেশে আল্লাহর আইন চালুর করার জন্য যাঁরা জীবন দিতে রাজি আছেন, তাঁদের দুই হাত তুলতে বলে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন আল্লাহর কাছে, আমরা জীবন দেব, আল্লাহর আইন চালু করব ইনশা আল্লাহ। দ্বিতীয় স্বাধীনতা হয়ে গেছে। তাহলে আর কী আছে? আরেকটা যুদ্ধ আছে। সেই যুদ্ধ হচ্ছে ইসলাম কায়েম করার যুদ্ধ। বাংলাদেশের মাটিতে কোরআনের আইনের জন্য আমরা যুদ্ধ করব ইনশা আল্লাহ।’

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।