
রাঙামাটির সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের মুবাছড়ি গ্রামে কাপ্তাই হ্রদের ছোট দ্বীপে বিদেশি এ ফলের চাষ করেছেন প্রবীণ চাকমা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। তাঁর চার একর আয়তনের বাগানে রয়েছে পাঁচ শতাধিক রাম্বুটানগাছ।
গাছে ঝুলছে লাল রঙের থোকা থোকা ফল। কাছে গেলেই মনে হবে যেন চুলওয়ালা লিচু। তবে ফলটির নাম রাম্বুটান। রাঙামাটির সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের মুবাছড়ি গ্রামে কাপ্তাই হ্রদের ছোট দ্বীপে বিদেশি এ ফলের চাষ করেছেন প্রবীণ চাকমা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। তাঁর চার একর আয়তনের বাগানে রয়েছে পাঁচ শতাধিক রাম্বুটানগাছ।
রাঙামাটি শহরের যেকোনো ঘাট থেকে নৌপথে ৩০ মিনিটেই যাওয়া যায় বাগানটিতে। সম্প্রতি রাঙামাটি সদর থেকে নৌপথে নানিয়ারচরের বন্দুকভাঙা এলাকায় পৌঁছে ডান দিকে মুবাছড়ি গ্রামে ঢুকতেই বাগানটি চোখে পড়ে। বাগানটির চারদিকে কাপ্তাই হ্রদ, অদূরে হ্রদের দুই পাড়ে স্থানীয় বাসিন্দারের বসতঘর।
বাগানে অর্ধেকের মতো গাছে ফল ধরেছে। এরপরও এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২০০ কেজির মতো রাম্বুটান বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। আরও অনেক ফল বিক্রি করা যাবে।বিকেল চাকমা, বাগানের তত্ত্বাবধায়ক
বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা রাম্বুটান ঝুলছে। বাগানে কথা হয় বিকেল চাকমার সঙ্গে। তিনি বাগানটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। বিকেল চাকমা বলেন, বাগানে অর্ধেকের মতো গাছে ফল ধরেছে। এরপরও এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২০০ কেজির মতো রাম্বুটান বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। আরও অনেক ফল বিক্রি করা যাবে।
বাগানমালিক প্রবীণ চাকমা চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন। মুঠোফোনে তিনি জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই প্রথম রাম্বুটান দেখেন। এরপর নিজের রাম্বুটানের বাগান করার শখ জাগে। পরে স্বজন ও কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০২১ সালে বাগান শুরু করেন। বাগানের জন্য ভারতের চেন্নাই থেকে ৫০০ চারা আনা হয়। প্রতিটি চারার দাম পড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
প্রবীণ চাকমা জানান, বাগান থেকে প্রতি কেজি রাম্বুটান বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। সাধারণত কেজিতে ২৫ থেকে ৩০টি রাম্বুটান ধরে। তাঁর বাগানে চারা লাগানোর দুই বছরের মাথায় প্রথম ফল ধরে। তবে প্রথমবার বিক্রি করেননি। গত বছর এ বাগান থেকে দুই লাখ টাকার রাম্বুটান বিক্রি করেছেন। এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। আরও দুই লাখ টাকার রাম্বুটান বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রবীণ চাকমার।
রাম্বুটান মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ফল। তবে পরে এর চাষাবাদ থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কায় ছড়িয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে। সুস্বাদু এ ফলে প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়ামসহ নানা ঔষধি গুণ রয়েছে।
কৃষি ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাম্বুটান মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ফল। তবে পরে এর চাষাবাদ থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কায় ছড়িয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে। সুস্বাদু এ ফলে প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়ামসহ নানা ঔষধি গুণ রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণের বনরূপা হর্টিকালচারের উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা বিচিত্র চাকমা বলেন, রাম্বুটানে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ফুল ধরে। এরপর মে থেকে জুন মাসে রাম্বুটান ফল পাকা শুরু হয়। ফল পাকা অবস্থাতেও ফুল ধরে। এভাবে তিন ধাপে রাম্বুটানগাছে ফলন হয়।
প্রবীণ চাকমা বাগানে রাম্বুটানের পাশাপাশি মাল্টা আর বরই চাষ করেছেন। আবার রাম্বুটানের গাছে কলম দিয়ে চারাও বিক্রি করছেন। তাঁর বাগান দেখে আশপাশের বাসিন্দারা রাম্বুটান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা শান্তি রঞ্জন চাকমা সুভাষ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, রাম্বুটান বাগানে ফলন বেশি ধরে। আবার দামও বেশি। প্রবীণ চাকমার বাগান দেখে তিনি নিজেও একটি বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিচ্ছেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রবীণ চাকমা সফল একজন কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাগান দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক।