আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি সংসদীয় আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভ্যাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ বৈঠকে আলোচনার একপর্যায়ে উঠে আসে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রসঙ্গ। বৈঠকে উপস্থিত বগুড়া জেলা বিএনপির একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া বিএনপির দুর্গ, দলের তীর্থস্থান। সেখানকার নেতারা জিয়া পরিবারের ঘরের মানুষ। এ কারণে ঘরের মানুষদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য এ বৈঠকের আয়োজন। বগুড়া বিএনপির মডেল জেলা। এ কারণে আগামী নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় বগুড়াকে মডেল জেলা হিসেবে উদহারণ তৈরি করতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তাঁদেরই আজকের (গতকাল) এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। প্রতিটি আসনে মনোনয়ন চান একাধিক নেতা। কিন্ত অধিক যোগ্যতার ভিত্তিতে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে একজনকে। ধানের শীষের মনোনয়ন যাঁকে দেওয়া হবে, তাঁকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আছে, যোগ্য ব্যক্তিদের এসব নির্বাচনে প্রার্থী করা ছাড়াও দলীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে। মনোনয়ন না পেলেও সব ভুলে ধানের শীষকে জেতানোর জন্য কাজ করতে হবে। কোনো বিশৃংঙ্খলা করা চলবে না। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের ধানের শীষের পক্ষে একযোগে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপনে বগুড়া হবে মডেল জেলা। বগুড়াকে অসুসরণ করে অন্য জেলাতেও মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের সবাই ধানের শীষকে জেতাতে একযোগে কাজ করবেন।
বৈঠকের একপর্যায়ে বগুড়ার সাতটি আসনভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংক্ষিপ্ত কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ পর্যায়ে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি আবদুল বাছেদ বলেন, বগুড়া-২ আসন বিএনপির শক্ত দুর্গ। সেখানকার ভোটাররা ধানের শীষকে ভালোবাসেন। এ আসনে যাঁকেই প্রার্থী করা হোক না কেন, তাঁর হাতে যেন ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের পৈতৃক ভূমি বগুড়া। বিএনপির প্রার্থীর হাতে তো ধানের শীষই থাকবে। এটা আলোচনায় তোলার কী আছে?
এ কথার উত্তরে তারেক রহমান বলেন, বগুড়া-২ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। অ্যাডভোকেট বাছেদ হয়তো সে কারণেই ওই আসনে প্রার্থী যাঁকেই করা হোক, তাঁর হাতে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়ার কথা বলছেন।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির নেতারা জানান, বগুড়া-২ আসনটি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ছেড়ে দেওয়া হবে কি না, তা বৈঠকে স্পষ্ট করেননি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকালের আলোচনায় অংশ নেওয়া নেতাদের মধ্যে ছিলেন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসন থেকে দলের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, সারিয়াকান্দি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু মণ্ডল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুন্নবী সালাম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শাহ মো. শাহজাহান আলী, জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। বগুড়া-২ ( শিবগঞ্জ) আসন থেকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির জেলা সভাপতি আবদুল বাছেদ ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এম আর ইসলাম (স্বাধীন)। বগুড়া-৩ ( দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি) আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার, বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী এবং আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার।
এ ছাড়া বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসন থেকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মাহবুবুর রহমান (হারেজ), ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল আলম (মামুন), কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান (খোকন) এবং শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম।
বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম (বাদশা), জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহবুবর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এবং আলী আজগর তালুকদার। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটন এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার।