জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে একই প্রার্থী একাধিক পদে মনোনয়ন তুলেছেন। এমন অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁদের সবাই অন্তত দুটি করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কেউ আবার তিন থেকে চারটি পর্যন্ত পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জাকসুর খসড়া প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য দেখা গেছে। জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মোট ২৫টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একজন প্রার্থী কেবল একটি পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
খসড়া প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী একাধিক পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই ৩০ জন প্রার্থীর কেউ কেউ আবার তিন থেকে চারটি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেকে হল সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন। সে হিসেবে ওই ৩০ জন প্রার্থী অন্তত ৭০টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জাকসু নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া চূড়ান্ত খসড়া প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, জাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে মোট প্রার্থী হয়েছেন ২৭১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একই শিক্ষার্থী সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) দুটি পদেই প্রার্থী হয়েছেন। ওই প্রার্থীর নাম শেখ সাদী হাসান। তিনি শাখা ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থী। এ ছাড়া ভিপি ও এজিএস দুটি পদেই একই শিক্ষার্থী প্রার্থী হয়েছেন অন্তত ৭ জন। আর জিএস ও এজিএস দুটি পদেই একই শিক্ষার্থী প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন।
খসড়া প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একাধিক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীদের বেশির ভাগ ছাত্রদলের রাজনীতি করেন। তাঁদের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রদলের সভাপতি শেখ সাদী হাসান ভিপি ও জিএস দুটি পদেই প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রদলের সভাপতি হামিদুল্লাহ সালমান ভিপি, এজিএস, কার্যকরী সদস্যসহ তিনটি পদে, শাখা ছাত্রদলের সদস্য রাসেল আকন্দ ভিপি, এজিএস, সাহিত্য সম্পাদকসহ তিনটি পদে, শাখা ছাত্রদলের সদস্য মোহাম্মদ রুবেল জিএস, এজিএস, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদসহ চারটি পদে, শাখা ছাত্রদলের সদস্য সাজ্জাদুল ইসলাম জিএস, এজিএসসহ দুটি পদে, শাখা ছাত্রদলের সহদপ্তর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জিএস, এজিএস, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক, পরিবহন সম্পাদকসহ চারটি পদে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান জিএস, এজিএস, কার্যকরী সদস্য পদসহ তিনটি পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া শাখা ছাত্রদলের সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া জিএস, এজিএস, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকসহ তিনটি পদে, ১৩ নম্বর ছাত্রী হল ছাত্রদলের সভাপতি তানজিলা বৈশাখী জিএস, এজিএসসহ দুটি পদে, রোকেয়া হল ছাত্রদলের সভাপতি কাজী মৌসুমি আফরোজ এজিএস, সহ-সমাজসেবা সম্পাদকসহ দুটি পদে, শহীদ সালাম-বরকত হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল সমাজসেবা ও সহ-সমাজসেবা সম্পাদকসহ দুটি পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি শাফায়েত মীর ভিপি, জিএস ও পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সম্পাদকসহ তিন পদে প্রার্থী হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহের বুধবার ক্যাম্পাসে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াসহ কয়েকজন নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাকসুর প্রার্থী কারা হবেন, সেসব নিয়ে আলোচনা করে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন তাঁরা। পরে তালিকা অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীদের সবাইকে একাধিক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ফলে নেতা-কর্মীরা বেশির ভাগ একাধিক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে ছাত্রদল প্যানেল ঘোষণা না করায় কোন পদে কে প্রার্থী হবেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন বাবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনে একই পদের জন্য একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। বিগত দিনে তাদের সংগঠনের প্রতি ডেডিকেশন এবং দক্ষতা ও শিক্ষার্থীদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা প্যানেল ঠিক করব। সে হিসেবে যোগ্য প্রার্থীদের একাধিক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা ছিল। প্যানেল ঘোষণা করার পর যার যে পদ নির্ধারিত হবে, সেটি রেখে বাকি পদ প্রত্যাহার করবে।’
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, একজন শিক্ষার্থী একটি পদেই নির্বাচন করতে পারবেন। যদি কেউ একাধিক পদে প্রার্থী হয়ে থাকেন এবং যথাসময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করেন, তাহলে তাঁর সব মনোনয়নপত্র বাতিল হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৯ আগস্ট বিকেল ৪টায়। ২৯ আগস্ট বিকেল ৪টা থেকে ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন।