ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করেন। শুক্রবার দুপুরে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

ছয় দফা দাবিতে  ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত জেলার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি এলাকায় নিজ ইনস্টিটিউটের সামনে তাঁরা এই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা একযোগে এই কর্মসূচি পালন করেন।

বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি এলাকা মিছিলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বের হয়। এ সময় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ‘অবৈধ দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘দিয়েছি তো রক্ত আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘মামা থেকে মাস্টার, মামার বাড়ির আবদার’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘চলছে লড়াই চলবে, চলবে চলবেই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা ইসলামপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হন। এরপর তাঁরা মহাসড়কে বসে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে পাশ দিয়ে মহাসড়কে ধীরগতিতে যান চলাচল করছে। তবে কোনো যানজট হয়নি। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ফিরে যান। এ সময় বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মো. সাগর বলেন, ‘গতকাল আমাদের ১৮ জন সদস্য মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন না। আমরা কষ্ট পেয়েছি, অসন্তুষ্ট হয়েছি। আমরা কথা রেখে কর্মসূচি স্থগিত করেছি রাজপথে যাইনি। কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমরা আর কোনো সভায় বসতে রাজি নই। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তাঁরা আহত করেছেন। এ কারণে আমরা কাফনের কাপড় পরে এই কর্মসূচি পালন করেছি।’

বিক্ষোভের একপর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেন। শুক্রবার দুপুরে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি এলাকায়

মো. সাগর আরও বলেন, ‘১৯৮৭ সালে আমাদের ডিপ্লোমা ভাইয়েরা একইভাবে বিক্ষোভ করেছিল। গতকাল আমাদের বৈঠক ছিল আওয়ামী ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এই আওয়ামীপন্থীদের ব্যবহার করে তারা এখন অনেক কিছুই সরাতে চাচ্ছে। আমাদের দাবি আদায় হবে রাজপথে।’

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জামিল আহমেদ বলেন, ‘কুমিল্লায় যৌথ বাহিনী আমাদের ভাই ও বোনদের যেভাবে আহত ও লাঠিপেটা করেছে, তার সঠিক বিচার দাবি করছি। আমাদের দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

আরেক শিক্ষার্থী এহসান এলাহি রাতুল বলেন, ‘আট মাস আগে যে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, গতকালও সেই পরিস্থিতিতে হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তিনি সুন্দরভাবে দেশ চালাচ্ছেন। তিনি ফ্যাসিবাদ কুচক্রের দুরবস্থা থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। আমরা চাই, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত থেকে বিষয়টি সমাধান করে আমাদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। আমরা কোনো লিখিত প্রমাণ ছাড়া, পেপার ওয়ার্ক ছাড়া রাজপথ ছাড়ব না।’

বিজয়নগর ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রাজীব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ফিরে যান। এ সময় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।