
রাজশাহীতে চতুর্থ দিনের মতো সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে নগরজুড়ে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। আজ বুধবার সকাল ছয়টায় রাজশাহীতে চলতি শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল ১০টার দিকেও নগরের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার ঘনত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে শীত আরও তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। এর আগের দিন মঙ্গলবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কয়েক দিন ধরেই রাজশাহীতে শীতের প্রকোপ চলছে। রোববার থেকে টানা সূর্যের দেখা মিলছে না। উত্তরের হিমেল বাতাস ও কুয়াশা মিলিয়ে শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দুই দিন ধরে কুয়াশা পড়ছে বৃষ্টির মতো। গতকাল মঙ্গলবার এই বৃষ্টির মতো কুয়াশাকে বৃষ্টি হিসেবেই গণ্য করেছে আবহাওয়া অফিস। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসে শূন্য দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ সকাল ছয়টায় নগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকালের তুলনায় তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৪ ডিগ্রি। আগামী কয়েক দিন শীতের এ তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, আজ যে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা যায়। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন থাকতে পারে। বৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল মূলত বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরেছে। এটাকে বৃষ্টিই বলা চলে।’
তীব্র শীতে জনজীবনেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। নগরের সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। যাঁরা বের হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই মোটা শীতের পোশাকে নিজেকে ঢেকে রেখেছেন। নগরের বিভিন্ন শীতের পোশাক বিক্রির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মো. জামাল তিন দিন পর আজ রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কয়দিন ধইরা ঠান্ডা খুবই বেশি। বাইর হইয়া ভাড়া পাওয়া যায় না, তাই কইরা কদিন বাইর হই নাই। কিন্তু ব্যাটারি ডাউন হইয়া যাইব বইলা আজ রিকশাডা রানিং রাখতে বাইর হইছি। আজকে যে ঠান্ডা, মনে অয় না আজ রোদ উঠব।’
তীব্র শীতে রাজশাহী নগর অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। সাধারণত জনবহুল কুমারপাড়া মোড়েও সকাল ১০টার দিকে যানবাহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। সেখানে ভ্যানগাড়িতে শীতের হাতমোজা, পা–মোজা ও টুপি বিক্রি করছেন আবদুল হক। ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও দর নিয়ে চলছে কথা-কাটাকাটি। ক্রেতা রেদোয়ান ইসলাম বলেন, ‘শীত বাড়ায় দাম একটু বেশি চাইছে। তারপরও ৪০ টাকা দিয়ে এক জোড়া হাতমোজা কিনলাম। আজকের ঠান্ডাটা অন্য রকম।’ তবে বিক্রেতা আবদুল হক বলেন, দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে না, শীত বাড়ায় বিক্রি বেড়েছে।
শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। নগরের তালাইমারী মোড়ে ভোর থেকে দিনমজুরদের কাজের হাট বসে। প্রতিদিন দেড় শতাধিক শ্রমজীবী সেখানে আসেন। আজ সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মাত্র ১৫ শ্রমিক কাজ পেয়েছেন। কাজ না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
শ্রমজীবী মো. হাদী বলেন, ‘এমনিতেই কামকাজ নাই। তার ওপর কয় দিন ধইরা খুব ঠান্ডা পড়ছে। আমি ছয় দিন ধইরা আইতেছি, এইডার মধ্যে মাত্র দুই দিন কাম পাইছি।’
শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এসব রোগীর মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ ছাড়া আগুন পোহাতে গিয়ে কিংবা গরম পানিতে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত জটিলতা নিয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শীতের সময় অনেকেই আগুন পোহাতে গিয়ে কিংবা গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে অসতর্ক হন। এতে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা কখনো কখনো প্রাণঘাতীও হতে পারে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।