
বিয়েতে উপহার হিসেবে শাড়ি, গয়না বা আসবাব নয়, রাজশাহীর তথাপি আজাদের বিয়েতে এল এক অনন্য উপহার—দেড় হাজার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের চারা। সুন্দরী, কাঁকড়া, পশুর, খলিশা ও বাইনের মতো সুন্দরবনের গাছগুলো এখন তাঁর বিয়ের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে বেড়ে উঠবে রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে।
রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা তথাপি আজাদ সাংবাদিক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের ছোট মেয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। ৩ অক্টোবর তাঁর বিয়ে হয় গোদাগাড়ী উপজেলার হাসিবুল আলমের সঙ্গে।
বিয়ের এই ব্যতিক্রমী উপহারটি দিয়েছেন তিন অতিথি—রাজশাহীর দাতব্য প্রতিষ্ঠান মৌমাছি ও মধু পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আকমাল মাহমুদ, চট্টগ্রামের আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার এবং ‘চাঁপাই আমবাগান’-এর উদ্যোক্তা সাহাবুদ্দিন।
উপহারের মূল উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার। সুন্দরবনের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা থেকে তিনি নিজ বাড়িতে ‘এক টুকরো সুন্দরবন’ নামে একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। সুন্দরবনের বীজ সংগ্রহ করে তিনি তৈরি করেছেন এসব চারা। বিয়ের উপহার হিসেবে গতানুগতিক কিছু না দিয়ে এমন কিছু দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, যা কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে। তিনি অনুষ্ঠানে আসতে না পারলেও কুরিয়ারে পাঠিয়েছেন ২০০ সুন্দরী, ২০০ কাঁকড়া, ১০০ পশুর, এক হাজার খলিশা ও ২০টি বাইনগাছের চারা।
গতকাল শুক্রবার সকালে গাছগুলো রাজশাহীতে পৌঁছায়। বিকেলে রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকার লালন শাহ মুক্তমঞ্চের পাশে পদ্মার চরে এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আকমাল মাহমুদ কনে তথাপির হাতে বিয়ের এই উপহার তুলে দেন। তথাপি নিজের হাতে একটি চারা রোপণ করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাজশাহী সদর (বোয়ালিয়া) অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন একটি সুন্দরী গাছের চারা রোপণ করেন।
বিয়ের এমন উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত তথাপি আজাদ বলেন, ‘বিয়েতে নানা রকম উপহার পেয়েছি। কিন্তু দেড় হাজার গাছ, তা-ও আবার সুন্দরবনের। এটা অসাধারণ এক অনুভূতি। গাছগুলো যখন বড় হবে, তখন বলতে পারব, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিচিহ্ন।’
তথাপির স্বামী হাসিবুল আলম বলেন, আজকের এই ঘটনা সবার জন্য একটি দারুণ বার্তা। এই গাছগুলো একদিন বড় হয়ে পাখিদের আশ্রয়স্থল হবে, প্রাণ-প্রকৃতিতে ভরে উঠবে।
তথাপির বাবা আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ বলেন, ‘আমি অভিভূত হয়েছি। তবে একই সঙ্গে চিন্তায় পড়েছিলাম, এত গাছ লাগাব কোথায়? পরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা পদ্মার চরের জায়গাটি নির্ধারণ করে দেন। যাঁরা এই উপহার দিয়েছেন এবং রোপণের জন্য জায়গা দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, রাজশাহীর পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। এই উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।
মুঠোফোনে সৈয়দ মঈনুল আনোয়ার বলেন, ‘রাজশাহী আমার খুব প্রিয় শহর। কখনো জারুল ফুলে বেগুনি, কখনো পলাশ ফুলে লাল হয়ে থাকে এখানকার পথঘাট। চেয়েছিলাম তথাপির নতুন জীবনটাও এমন সবুজ ও সুন্দর হোক। অন্য উপহার তো একসময় হারিয়ে যায়, কিন্তু এই গাছগুলো যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে, অক্সিজেন দেবে, ছায়া দেবে। আমার স্বপ্ন, একদিন সারা দেশের মানুষের সঙ্গে সুন্দরবনের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হবে।’