
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আজাদ হোসেনকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার উপজেলা মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে পৌর শহরের থানার মোড় এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কিছু নেতা–কর্মী তাঁর ওপর এই হামলা করেন বলে অভিযোগ বিএনপির।
হামলার পর আজাদ হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজাদ হোসেন সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির একাংশের সভাপতি।
উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজাদ হোসেনের মাথায় হাতুড়িজাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এতে মাথার খুলি ফেটে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উল্লাপাড়া পৌর বাস টার্মিনালে সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির একটি কার্যালয় আছে। সম্প্রতি টার্মিনালটি পৌর জামায়াতের আমির আবদুল করিমের নামে ইজারা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর জামায়াত ও শিবিরের কিছু নেতা–কর্মী বাস মালিক সমিতির কার্যালয় দখলের চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে বিরোধ চলছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত–শিবিরের লোকজন বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির কার্যালয়ে থাকা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ভাঙচুর করেন। এ কাজে বাধা দিলে জামায়াত–শিবিরের লোকজন আজাদ হোসেনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান। এরপর আজ জুমার নামাজ পড়ে বাড়িতে ফেরার পথে আজাদ হোসেনের ওপর হামলা চালানো হয়।
উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব নিক্সন কুমার বলেন, পৌর শিবিরের প্রচার সম্পাদক হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আবদুল মমিন, আতাউর রহমান ও শাকিল আহমেদ অতর্কিতভাবে এই হামলা চালান। হামলা ঠেকাতে গিয়ে উপজেলা যুবদলের কার্যনির্বাহী সদস্য রাসেদুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
হামলার বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল করা হলেও তাঁরা ধরেননি। উপজেলা জামায়াতের আমির শাহজাহান আলী বলেন, শিবির নেতা হাফিজুরের সঙ্গে বিএনপি নেতা আজাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। জামায়াত ইসলামীর কোনো সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ হয়নি।
পৌর জামায়াতের আমির আবদুল করিমের অভিযোগ, গত ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো প্রকার রসিদ ছাড়া জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নামে উল্লাপাড়া পৌর বাস টার্মিনালে প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি (আবদুল করিম) উল্লাপাড়া পৌরসভা থেকে পৌর বাস টার্মিনাল ইজারা নিয়েছেন। পৌর সচিবের নির্দেশে বাস প্রতি ৫০ টাকা কর আদায় করা হচ্ছে। সেখানেও টার্মিনালের শ্রমিক দলের নেতারা ভাগ নিয়ে ঝামেলা করছেন।
জামায়াত নেতা আবদুল করিম আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা তাঁদের (বিএনপি নেতা–কর্মী) সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। সেখানে কথার একপর্যায়ে আমাদের দুয়েকজন নেতা–কর্মী বলেন যে টার্মিনালের কোনো কার্যালয়ে দলীয় কোনো ছবি রাখা যাবে না। আর যেহেতু আমরা ইজারা নিয়েছি, সেই হিসাবে সব কার্যালয় ছেড়ে দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে একটুখানি হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছিল। পরে দুই পক্ষই শান্ত হলে আমরা চলে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় বিএনপি নেতা আজাদ হোসেনের কিছু লোক আমাদের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া করেছিলেন। এরপর আজ আবার এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’
উল্লাপাড়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিয়ামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান চলছে। বর্তমানে পৌর শহরে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।
সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (উল্লাপাড়া সার্কেল) অমৃত সূত্রধর বলেন, জুমার নামাজ শেষে আজাদ হোসেন তাঁর কয়েকজন লোকের সঙ্গে থানার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। ওই সময় তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল চার–পাঁচজন ছেলে। এ সময় কালো পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি পরা একটা ছেলে হঠাৎ আজাদ হোসেনকে ঘুষি মারেন। নিজেকে রক্ষার্থে তিনি যখন দৌড় দেন, তখন হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়। যে আঘাত করেছে তাঁর পরিচয় জানা গেছে। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে।