ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগে থেকেই নড়াইলের দুটি আসনে প্রচার শুরু করেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিভিন্ন দলের মনোনয়ন ঘোষণার পাশাপাশি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এখন তাঁরা নতুন উদ্যমে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এত দিন সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও উঠান বৈঠক করে এলেও তফসিলের পর প্রকাশ্যে প্রচার আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে দলীয় নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে ভোট নিয়ে আলোচনা।
জেলার দুটি আসনেই বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে নড়াইল–১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর দুই নেতা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। নড়াইল–২ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখনো পরিবর্তনের আশা করছেন শরিক দলের এক নেতা। জামায়াতে ইসলামীর জেলার দুই শীর্ষ নেতা দুই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা প্রচারে রয়েছেন।
ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রভাব থাকা জেলার দুটি আসনে ২০০১ সালে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় এবার মাঠে নেই দলটির নেতা–কর্মীরা।
জেলার দুটি আসনে মোট ভোটার ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭০২ জন। এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন, এমন প্রার্থীকেই বেছে নিতে চান ভোটাররা। নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর এলাকার শিক্ষার্থী উসামা নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই, যাকে ভোট দিলে শান্তিতে বসবাস করা যাবে। যে সংসদে গিয়ে আমাদের সমস্যা তুলে ধরতে পারবে। আমাদের অবহেলিত জেলার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’
নড়াইল–১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর দুই নেতা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন।
নড়াইল-১ (সদরের একাংশ–কালিয়া)
আসনটিতে এবার বিএনপির প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। এর আগেও দুবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি, কিন্তু সংসদে যেতে পারেননি। নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
এদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এম সাজ্জাদ হোসেন। ২০১৮ সালে এই আসনে বিএনপি তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া শহীদ জিয়া পরিষদ নড়াইল জেলা কমিটির সদস্য বি এম নাগিব হোসেনও সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি প্রচারও শুরু করেছেন।
বিএনপির প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নড়াইল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। বিগত সরকারের আমলে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ক্ষমতায় এলে অবহেলিত নড়াইলের সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আমরা হাতে নেব। মাদকাসক্তিতে ঝুঁকে পড়া যুবসমাজ ও বেকার সমস্যা দূর করার চেষ্টা করব। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন এলাকায় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। এ ছাড়া ভবিষ্যতে নদীভাঙন, স্বাস্থ্য খাতসহ সব জনকল্যাণমুখী কাজ করব।’
বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ কায়সার। তিনি জামায়াতের জেলা শাখার সেক্রেটারি। এর আগে নড়াইল সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এবারই প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচিত হলে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন জানিয়ে ওবায়দুল্লাহ কায়সার বলেন, ‘আমি মনে করি, গত বছরের ৫ আগস্টের পর আমরা যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছি, সেই দেশ গঠনের জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।’
এই আসনে প্রচার চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবদুল আজিজ, গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী আশিকুর রহমান। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী আবদুর রহমানের পোস্টারও চোখে পড়েছে কোথাও কোথাও। তবে আসনটিতে এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি এনসিপি।
আওয়ামী লীগের প্রভাব থাকা আসনটিতে ২০০১ সালে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম দফায় মনোনয়ন ঘোষণার সময় নড়াইল–২ আসনটি ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি। আসনটি যুগপৎ আন্দোলনে শরিক কোনো দলকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা শুরু হয়। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে ২০১৮ সালে আসনটিতে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছিল। এবারও তিনি নির্বাচন করতে এলাকায় তৎপর।
দ্বিতীয় দফা মনোনয়ন ঘোষণার সময় আসনটিতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে দলীয় প্রার্থী করা হয়। তিনি এর আগে একবার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি নিয়মিত ভোটারদের কাছে ছুটছেন, জনগণের জন্য বিভিন্ন কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নড়াইলের কাদামাটি থেকেই আমার বেড়ে ওঠা। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হাসপাতাল। নির্বাচিত হলে হাসপাতালটিকে আড়াই শ শয্যায় উন্নীত করে চালু করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি একটি মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিজেড স্থাপনসহ চিত্রা নদী ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
২০১৮ সালে এই আসনে বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের দাবি জানিয়েছি। ধারণা করছি, মনোনয়ন পরিবর্তন হবে।ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান
তবে এখনো বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে এই আসনে বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের দাবি জানিয়েছি। ধারণা করছি, মনোনয়ন পরিবর্তন হবে।’
জামায়াত এখানে মনোনয়ন দিয়েছে আতাউর রহমানকে (বাচ্চু)। তিনি দলের নড়াইল জেলা শাখার আমির। প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি সভা–সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘সংসদীয় এলাকার সব বাজার, হাটঘাট ও মোড়ে আমার গণসংযোগ হয়েছে। মানুষের মধ্যে অভাবনীয় সাড়া আমরা লক্ষ করছি। সবাই এবার ভিন্ন কিছু দেখতে চান, জামায়াতকে আগামী নির্বাচনে জয়ী করতে চান।’
এই আসনে তৎপর আছেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তাজুল ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের নূর ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের তালহা ইসলাম, খেলাফত মজলিসের হান্নান সরদার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহসিন উদ্দিন। এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় আছেন সামিরা খানম।