
‘আমার ছেলেকে আমার সামনে থেকে ১০ বছর আগে তুলে নিয়ে যায় একটি বাহিনী। এরপর ১০ বছর ধরে ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছি। কেউ সন্ধান দিতে পারেনি। মামলাও নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ আমি শয্যাশায়ী। মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। ছেলেকে যারা গুম করেছে, তাদের বিচার দেখে যেতে চাই।’
ফেনীতে আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আলোচনা সভায় গুমের শিকার যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান রিপনের মা রওশন আরা বেগম এ কথা বলেন। বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ফেনী ইউনিটের আয়োজনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধিকারের সংগঠক শাহজালাল ভূঁইয়া। অধিকারের কর্মী আবদুস সালাম ফরায়জীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রবিউল হক, মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, সুজনের ফেনী শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মহি উদ্দিন খোন্দকার, জাসাস ফেনী শাখার সভাপতি সাংস্কৃতিক সংগঠক কাজি ইকবাল আহমেদ, প্রথম আলোর ফেনী প্রতিনিধি নাজমুল হক, ফেনী বন্ধুসভার উপদেষ্টা শেখ নুর উদ্দিন চৌধুরী।
অধিকারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন শাহজালাল ভূঁইয়া। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র জনতা একটি রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এখনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ গুমের ঘটনা বর্তমানে বন্ধ হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতন এখনো চলছে।
শাহজালাল ভূঁইয়া বলেন, অনলাইনে নারীদের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি করতে না পারায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।