Thank you for trying Sticky AMP!!

ভাসমান হাঁসের খামারে খাবার কম লাগে। ফলে লাভ হয় বেশি। গত শুক্রবার গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামে

দুই বন্ধুর ভাসমান হাঁসের খামার

দুই বন্ধুর খামারে এখন ৬০০টি হাঁস। প্রতি মাসে খামার থেকে গড়ে ৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

দিনারুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন দুই বন্ধু। দুজনের বয়স ত্রিশের কোঠায়। দিনারুল উচ্চমাধ্যমিক পাস। অভাব-অনটনের কারণে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি আর জসিম প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন মাত্র। একসঙ্গে বেড়ে ওঠা ছোটবেলা থেকে। দুজনই বেকার ছিলেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। ঘাঘট নদের তীরে তাঁদের বাড়ি। তাই দুজনে পরামর্শ করে গড়ে তোলেন ভাসমান হাঁসের খামার।

তাঁদের খামারে এখন ৬০০টি হাঁস। প্রতি মাসে খামার থেকে গড়ে ৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। দুজনই এখন স্বনির্ভর। অভাব আর তাঁদের দুয়ারে হানা দিতে পারে না।

হাঁসের খামার দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তা পেলে এই খামার আরও বড় করব।
দিনারুল ইসলাম, খামারি 

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামে দিনারুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিনের বাড়ি। গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে সাদুল্যাপুর উপজেলা। উপজেলা সদরের কলেজ রোডে ঘাঘট নদের ওপর নির্মিত সেতু। নাম ঘাঘট সেতু। সেতুর পাশে গড়ে উঠেছে দুই বন্ধুর ভাসমান হাঁসের খামার। নদীতীরের একবিঘা জমিতে সারি সারি গাছ। জমিজুড়ে খামারটি বিস্তৃত। এলাকাটি সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের অন্তর্গত।

গত শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায় নদীতে হাঁস পালনের চিত্র। নদীর পানি ও তীরে হাঁসের কোলাহল। হাঁসগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। এক বন্ধু খামারে হাঁসের পরিচর্যা করছেন। আরেক বন্ধু ডিম সংগ্রহ করছেন। কখনো দুই বন্ধু মিলে হাঁসের খাদ্য প্রস্তুত করছেন। 

দিনারুল ও জসিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীতে হাঁস পালন করলে খাবার কম লাগে। হাঁসগুলো নদী থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করে। এতে লাভ বেশি হয়। তাই দুই বন্ধু ভাসমান হাঁসের খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। শিক্ষিত দিনারুলের মেধা আছে, কিন্তু নদীর তীরে জমি নেই। জসিমের নদীর তীর ঘেঁঘে জমি আছে। কথামতো কাজ। একজনের মেধা আরেকজনের জায়গা। দুই বন্ধু ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করেন। এ টাকা দিয়ে ২০২১ সালের প্রথম দিকে এক হাজার হাঁসের বাচ্চা কেনেন। বড় করে ৪০০ হাঁস বিক্রি করেন। বাকি ৬০০ হাঁস দিনে গড়ে ৫০০ ডিম দিচ্ছে। ডিম বিক্রি করে তাঁদের মাসিক আয় হচ্ছে গড়ে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে শীতের কারণে ডিম উৎপাদন কমেছে।

দিনারুল ইসলাম বলেন, হাঁসের খামার দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তা পেলে এই খামার বড় করবেন। তাঁর বন্ধু জসিম উদ্দিনও একই মন্তব্য করেন।

খামারের মালিক দিনারুলের বাবা আবদুর রউফ অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। মা বিলকিস বেগম গৃহিণী। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দিনারুল দ্বিতীয়। কয়েক মাস আগে তিনি বিয়ে করেছেন। জসিম উদ্দিনের বাবা সাহেব উদ্দিন একজন কৃষক। জসিমও তিন মাস আগে বিয়ে করেছেন।

এদিকে এ খামারে উৎপাদিত ডিম পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানকার পাইকারেরা এসে ডিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্র গ্রামের ডিম ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, হাঁসের খামার থেকে প্রতিটি ডিম ১৩–১৪ টাকায় বিক্রি করেন। খুচরায় প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫–১৭ টাকা। 

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার সাতটি উপজেলায় ২ হাজার ৮২৭টি মুরগি ও হাঁসের খামার রয়েছে। এর মধ্যে সাদুল্যাপুর উপজেলায় রয়েছে ৫৪টি হাঁসের খামার।

সাদুল্যাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলম প্রথম আলোকে বলেন, খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, চিকিৎসা সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।