
সিটি ইউনিভার্সিটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এম আর কবির। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
গত রোববার রাতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ জানাতে আজ দুপুর ১২টার দিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমিনুল ইসলাম হল রুমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল, এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত তুলে ধরে উপাচার্য অধ্যাপক এম আর কবির বলেন, গত রোববার সন্ধ্যায় সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর শরীরে থুতু নিক্ষেপ করলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলে’ সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয়। পথঘাটে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হয়। এ ঘটনার পর ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে বন্ধুদের উদ্ধারের চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
এম আর কবির বলেন, ‘পরদিন (সোমবার) বেলা তিনটা পর্যন্ত সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনের নির্দেশে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখা হয়। ক্ষতিপূরণের নামে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। জীবননাশের হুমকি দিয়ে মিথ্যা জবানবন্দি আদায়সহ মিডিয়া কাভারেজ করানো হয়। আহত সংকটাপন্ন শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে বিলম্ব ঘটে, যা জীবননাশের প্রচেষ্টার শামিল। আমাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে জিম্মি শিক্ষার্থীদের হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।’
সিটি ইউনিভার্সিটিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা সিটি ইউনিভার্সিটির পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে উপাচার্য বলেন, ‘সারা দিন ধরে আটক-নাটকে কেউ কেউ ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহারের কথা উল্লেখ করলেও শিক্ষার্থী হস্তান্তরপ্রক্রিয়ার সময় সেই অভিযোগ অনুপস্থিত ছিল। এর অর্থ হয় তারা নিজেরা সেই অস্ত্রের বিষয়টি মিথ্যা বলেছিল, না হয় অস্ত্রগুলো তাদেরই ছিল। রোববার অফিস খোলার দিন দেড় কোটি টাকা নাকি তাদের অফিসে ক্যাশ জমা ছিল। এ বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে এটা প্রতীয়মান হয় যে তারা পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়ে টাকা চুরিসহ অন্যান্য দায়ভার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে।’
সংঘর্ষ-ভাঙচুরের ঘটনায় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির গুরুত্ব আছে, তবে বিষয়টি কখনোই মানুষের জীবনের সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক এম আর কবির। তিনি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।
সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় মামলা করবে বলে জানিয়েছে। এ বিষয়ে ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইউজিসির নির্দেশনা অনুসারেই আমরা ব্যবস্থা নেব। ইউজিসি যেভাবে বলবে, সেভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
অধ্যাপক এম আর কবির জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁদের ছয়জন শিক্ষার্থী বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। ১৫ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। হামলায় আহত তাঁদের শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনা তদন্তে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাসুম ইকবালকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ইউজিসিও জানিয়েছে, তারা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর আবার ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করা হবে। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে।