রাকসু ভবন
রাকসু ভবন

রাকসু নির্বাচন

দ্বিতীয় মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চেয়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের আবেদন, সিদ্ধান্ত আজ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স করার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় সিনেট ভবনে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

১৯৯০-এর দশক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বা ডাবল মাস্টার্স চালু নেই। সাবেক ছাত্রনেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোর্সটি আবার চালুর বিষয়েই সভায় আলোচনা হবে। ডিন, বিভাগীয় প্রধান, ইনস্টিটিউট পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা সভায় অংশ নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকেরা এ বিষয়ে এককাট্টা হয়ে আবেদনকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দীন খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাক্তন কয়েকজন শিক্ষার্থীর আবেদন এসেছে। একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতাদের কয়েকজন বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম করে উপাচার্যের কাছে দ্বিতীয় মাস্টার্স কোর্সের আবেদন করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ শিক্ষকের সুপারিশ ছিল। এরপর শোনা যায়, শুধু ছাত্রদলই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক একজন সমন্বয়ক, একজন বাম নেতাও আবেদন করেছেন। গুঞ্জন ওঠে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের অছাত্র নেতারাও আবেদন করেছেন। তবে শিবির তা অস্বীকার করেছে।

আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ‘ফ্যাসিস্ট শাসনামলে’ রাজনৈতিক হয়রানি ও কারাবরণের কারণে তাঁরা সুষ্ঠুভাবে মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। তাই দ্বিতীয়বার সুযোগ চান তাঁরা। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী), সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম (শফিক), সহসভাপতি শাকিলুর রহমান (সোহাগ), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান (মুন্না)।

অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মনে করছেন, প্রাক্তন এই শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেলে এটি হবে নজিরবিহীন ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলান এমন একজন অধ্যাপক বলেন, প্রাক্তন এই ছাত্রদের ভর্তি করাতে অনেক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকেরা সুপারিশ করেছেন। রাজনৈতিক জায়গা থেকেও বিএনপি ও জামায়াতপন্থি এসব অধ্যাপকেরা চান প্রাক্তন এই ছাত্ররা দ্বিতীয় মাস্টার্স কোর্সে সুযোগ পাক। তাঁরা সরাসরি উপাচার্যকে সুপারিশ করে জানিয়েছেন যেন তাঁদের সুযোগ দেওয়া হয়। উপাচার্য একা সিদ্ধান্ত না নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল সভা ডেকেছেন।

ওই অধ্যাপক আরও বলেন, হয়তো সেখানে উপস্থিত বেশির ভাগই ওই নেতাদের পক্ষে কথা বলবেন। এটা ধরে নেওয়া যায় যে কাল হয়তো তাঁরা দ্বিতীয় মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাবেন। রাকসু যাতে সুষ্ঠুভাবে করা যায়, সেই চিন্তাও আছে উপাচার্যের। এ কারণে হয়তো তাঁরা সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।

উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব গত বৃহস্পতিবার ছাত্রনেতাদের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ছাত্রনেতাদের দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করার সুযোগ চেয়ে করা আবেদনে কিছু শিক্ষকও সুপারিশ করেছেন। বিষয়টি একাডেমিক দৃষ্টিতে বিচার করে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. আলী রেজা প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ডাবল মাস্টার্স আছে। এখানেও থাকা উচিত। তবে রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিংবা কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অথবা কোনো রাজনৈতিক নেতাদের সুযোগ করে দিতে যদি এটা চালু করা হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়।

রাকসু নির্বাচনের তফসিল ইতিমধ্যে ছয়বার সংশোধন করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বিতরণ শেষ হয়েছে ৩১ আগস্ট। আজ রোববার জমা দেওয়ার শেষ দিন। একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে আবেদনকারী ছাত্রনেতারাও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আবার তফসিল পুনর্বিন্যাস হতে পারে। যদিও ২৫ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ অপরিবর্তিত রয়েছে।