রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবন

রাকসুতে মনোনয়নপত্র বিতরণ স্থগিতের পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন ছাত্রনেতারা

অনিবার্য কারণ দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে এ সিদ্ধান্তের পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ আছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ছাত্রনেতারা বলছেন, বৃহৎ একটি ছাত্রসংগঠনের অনুরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ পোষ্য কোটাকে রাকসু নির্বাচনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে করছেন। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আদায়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করায় মনোনয়নপত্র প্রস্তুতিপর্বে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। শিগগিরই নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার পর এক বিজ্ঞপ্তিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পোষ্য কোটা পুনর্বহালসহ প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আদায়ে চার দিন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে গতকাল পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ছিল। এর আগে টানা তিন দিন তাঁরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরীক্ষা ও জরুরি সেবা ছাড়া অধিকাংশ বিভাগ ও দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দাবি পূরণ না হলে তাঁরা ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেন। কর্মবিরতিতে নেতৃত্ব দেওয়া অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিএনপি ও জামায়াতপন্থী। অন্যদিকে রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রদলের তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। তাদের অভ্যন্তরে রাকসুর প্যানেল নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। এ ছাড়া তারা রাকসুর জন্য প্রশাসনের কাছে মৌখিকভাবে সময় চেয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা। এ দুটি বিষয়কে মনোনয়নপত্র বিতরণ স্থগিতের কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

মনোনয়নপত্র বিতরণ স্থগিতের পেছনে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, যা রাকসু হওয়ার পথে আরেকটি বাধা। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছিলাম। অবশেষে হলোও তা–ই! রাকসু ১৫ সেপ্টেম্বরই অনুষ্ঠিত হতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে, তা দীর্ঘ মেয়াদে সংকট তৈরি করবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘কোটা ফিরে আসবে না এবং রাকসুও আমরা আদায় করেই নেব।’

মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি বলেছে, তফসিল অনুযায়ী ২০ আগস্ট মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরুর তারিখ নির্ধারিত থাকলেও কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। রাকসু নির্বাচন কমিশনের এ দ্বিচারিতায় তারা খুবই উদ্বিগ্ন। তারা মনে করে, একটা রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অছাত্রদের সুযোগ করে দিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা বৃহৎ ছাত্রসংগঠনের অনুরোধে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমি মনে করি।’

শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ কেন স্থগিত করা হয়েছে, সেটি আমরা জানি না। হয়তো পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রশাসন আমাদের কোনো দাবি-দাওয়া মানছে না। আমরা ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের বিচার, প্রগতিশীল নেতাদের হলে অবস্থানসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে সময় চেয়েছিলাম। তারা কোনো সাড়া দেয়নি।’

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আদায়ের জন্য গতকাল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করেছেন। এ জন্য আমাদের ও হলের সব কার্যক্রম সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এ কারণে মনোনয়নপত্র প্রস্তুতিপর্বে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। হলে মনোনয়ন ফরম পৌঁছে দিতে পারিনি। এ জন্য আজ মনোনয়ন ফরম বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে। তবে আজ বিকেলের জরুরি সভায় নতুন তারিখের সিদ্ধান্ত হবে। নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।’