হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে রাস্তার ধারে মায়া হরিণ। আজ সোমবার সকালে তোলা
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে রাস্তার ধারে মায়া হরিণ। আজ সোমবার সকালে তোলা

হবিগঞ্জের সাতছড়ি বনে হঠাৎ মায়া হরিণের দেখা

সকালে গাছের শাখা-প্রশাখা গলিয়ে উঁকি দিতে শুরু করেছে সূর্যের সোনালি আভা। হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা রাস্তার দুই ধারে এমন প্রত্যাশিত দৃশ্য উপভোগ করতে করতে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ রায়। পথে হঠাৎ থমকে দাঁড়ান তিনি। বিস্ময় নিয়ে অদূরে তাকিয়ে দেখেন, রাস্তার ধারে একটি মায়া হরিণ!

আজ সোমবার সকালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সড়ক এ দৃশ্যের দেখা মেলে। নিজের মুঠোফোনে সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নেন বিশ্বজিৎ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন পর আবারও উদ্যানটি চষে বেড়াচ্ছে মায়া হরিণ। তাই বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে প্রাণীটির। অনেকেই এর ডাকও শুনতে পান।

বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অচেনা অতিথির মতো দাঁড়িয়ে থাকা হরিণটির চোখে ছিল ভয় আর কৌতূহলের মিশেল। মুহূর্তেই বুকের ভেতর ধক করে ওঠে, আমি কি সত্যিই দেখছি? বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই না কাটতেই হরিণটি দৌড়ে বনের গভীরে ঢুকে যায়।’

বিশ্বজিৎ রায়ের ক্যামেরাবন্দী ছবিটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। তারপর শুরু হয় আলোচনা। কেউ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এ তো বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্যের জাগরণ।’ কেউ আবার আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার চোখেও দেখা গেল, শুধু ডাক নয়।’

কিছুদিন ধরে সন্ধ্যা ঘনালেই আশপাশের পাহাড় ও বন থেকে মায়া হরিণের ডাক ভেসে আসছিল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী আবদুল জাহির মিয়া। তিনি বলেন, এ ঘটনা বনের জন্য শুভসংকেত। সন্ধ্যা ঘনালে পাহাড় থেকে মায়া হরিণের ডাক ভেসে আসে, যা প্রমাণ করে সাতছড়ির পাহাড়ি বনে এখনো অবাধে বিচরণ করছে এই মায়া হরিণ।

মায়া হরিণকে অনেকে ‘কুঁচকানো হরিণ’ নামে চেনেন। ইংরেজিতে এটিকে Barking Deer নামেও ডাকা হয়। কারণ, বিপদ বুঝলেই কুকুরের মতো ডাক দেয় প্রাণীটি। লালচে-বাদামি শরীর আর লাজুক স্বভাবের কারণে হরিণটিকে খুব কম দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা প্রত্যাশা করছেন, বনটি সুরক্ষিত থাকলে একসময় হরিণের অভয়াশ্রমে পরিণত হবে। মায়া হরিণের সুরক্ষায় সতর্ক আছেন বলে জানালেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জার আনোয়ার হোসেন।