চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিড়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিড়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ভর্তি পরীক্ষায় কোন বিভাগে কত আসন কমল, কত হলে আবেদন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এবার বড় পরিবর্তন এসেছে। গত বছরের তুলনায় অন্তত ২২৫টি আসন কমছে। এ ছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পোষ্য কোটা এবার থাকছে না। ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতাও কমানো হয়েছে। গত বছরের মতো এ বছরও চট্টগ্রামের পাশাপাশি বিভাগীয় শহর ঢাকা ও রাজশাহীতে ভর্তি পরীক্ষা হবে।

গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। এ সভার লিখিত কার্যবিবরণী এখনো প্রকাশিত হয়নি। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচজন ডিন ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

সভা সূত্র ও একাধিক ডিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বছর ৪ হাজার ৩০৫টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর মধ্যে সাধারণ আসন ৩ হাজার ৭৮৬ ও বাকি ৫১৯টি কোটার জন্য বরাদ্দ। গত বছর এ আসন ছিল ৪ হাজার ৬৮৪টি। এর মধ্যে ৪ হাজার ১১টি সাধারণ আসন আর বাকি আসন কোটার জন্য বরাদ্দ ছিল। এ বছর পোষ্য কোটায় বরাদ্দ ৫৪টি আসন কমছে।

কোন বিভাগে আসন কমল

এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় ১৮ বিভাগ থেকে ২২৫টি আসন কমানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, রসায়ন, অর্থনীতি, রাজনীতিবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, লোকপ্রশাসন ও আইন বিভাগের আসনও ১১০ থেকে ১০০ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত অ্যাকাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, ফাইন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগের আসনও ১১০ থেকে ১০০ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইতিহাস, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আসন ১২০ থেকে ১০০, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ১০৫ থেকে ১০০ করা হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষায় আসনসংখ্যা ২০টি বিভাগের মোট ২২৫টি কমেছে। এর মধ্যে এ ইউনিটের রসায়ন বিভাগের আসন ১১০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। বি ইউনিটে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের আসন ১১০ থেকে ১০০ করা হয়েছে এবং ইতিহাস, দর্শন ও ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আসন ১২০ থেকে ১০০ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা বিভাগের আসন ১০৫ থেকে ১০০ করা হয়েছে। বি-২ উপ-ইউনিটের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আসন ১২০ থেকে কমে ১০০ হয়েছে। সি ইউনিটের অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, ফাইন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগের আসন ১১০ থেকে ১০০ করা হয়েছে। ডি ইউনিটের অর্থনীতি, রাজনীতিবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, লোকপ্রশাসন ও আইন বিভাগের আসনও ১১০ থেকে ১০০ করা হয়েছে।

কোন ইউনিটে কত আসন

গত বছরের মতো এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ইউনিট ও তিনটি উপ–ইউনিটের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা হবে। আগামী ২ জানুয়ারি হবে এ ইউনিটের পরীক্ষা। এতে বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত বিভাগ রয়েছে। ১৫টি বিভাগ মিলিয়ে এতে মোট আসন ১ হাজার ১১৩টি। গত বছর এতে আসন ছিল ১ হাজার ১২৩টি।

এ বছর পদার্থবিদ্যা বিভাগে ৯০, রসায়নে ১০০, গণিতে ৯০, পরিসংখ্যানে ৯০, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশলে ৩০, বনবিদ্যায় ৪০, পরিবেশবিজ্ঞানে ৩৫, প্রাণিবিদ্যায় ৮০, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ৮০, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় ৪০, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞানে ৪০, মাইক্রোবায়োলজিতে ৪০, মৃত্তিকাবিজ্ঞানে ৫০, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তিতে ৩৫, মনোবিজ্ঞানে ২৮ ও ফার্মেসিতে ৩০টি আসন রয়েছে।

অন্যদিকে মেরিন সায়েন্স ৪০, ওশানোগ্রাফি ৩০ ও ফিশারিজে ২৫টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৬৫ ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৫৫টি আসন রয়েছে।

এ ইউনিটে আবেদন করতে এ বছর চতুর্থ বিষয়সহ মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ–৪ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৩ থাকতে হবে। আবার দুটি মিলিয়ে ন্যূনতম জিপিএ–৮ থাকতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক

বি ইউনিট

বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে ১০ জানুয়ারি। এতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ও শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিভাগ রয়েছে। সব মিলিয়ে এতে মোট আসন ৮১১টি। গত বছর ছিল ৮৯৬টি।

বিভাগগুলোর মধ্যে বাংলায় ১০০, ইংরেজিতে ১০০, ইতিহাসে ১০০, দর্শনে ১০০, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ১০০, ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব ৪১, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ৫০, বাংলাদেশ স্টাডিজে ৫০ ও সংস্কৃততে ৭০টি (এর মধ্যে হিন্দুধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য ৬৫টি ও অন্যান্য ধর্মের জন্য ৫টি আসন)। এ ছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ১০০টি আসন রয়েছে।

বি ইউনিটে আবেদন করতে চতুর্থ বিষয়সহ মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ–৩.৫০ ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৩ থাকতে হবে। এ ছাড়া মোট জিপিএ–৭ থাকতে হবে।

সি ইউনিট

সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে ৯ জানুয়ারি। এতে আসন রয়েছে ৬০০টি। গত বছর ছিল ৬৪০টির। এখানে অ্যাকাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, ফাইন্যান্স, মার্কেটিং, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ রয়েছে। সব বিভাগে আসন রয়েছে ১০০টি। এতে আবেদন করতে মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ–৩.৫০ ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৩ থাকতে হবে। দুটি মিলিয়ে আবার ৭.৫০ থাকতে হবে।

ডি ইউনিট

ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩ জানুয়ারি। এতে সব বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার্থী এতে পরীক্ষা দিতে পারবেন। সব মিলিয়ে এতে আসন রয়েছে ৮১২টি। গত বছর ছিল ৮৬২টি।

এ বছর অর্থনীতি, রাজনীতিবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, লোকপ্রশাসন ও আইন বিভাগে ১০০, নৃবিজ্ঞানে ৮০, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ৮০, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ৬০, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে ৩৫, ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্সে ৩৫, ভূগোল ১০ ও মনোবিজ্ঞান বিভাগে ১২টি আসন রয়েছে। এতে আবেদন করতে চতুর্থ বিষয়সহ মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ–৩.৫০ ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৩ থাকতে হবে। দুটি মিলিয়ে আবার ন্যূনতম ৭.৫০ থাকতে হবে।

উপ–ইউনিট

বি-১ উপ–ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে ৭ জানুয়ারি। এতে আসনসংখ্যা অপরিবর্তিত—১২৫। বিভাগগুলোর মধ্যে নাট্যকলায় ৩৫, সংগীতে ৩০ ও চারুকলা ইনস্টিটিউটে ৬০টি আসন রয়েছে। এতে আবেদন করতে চতুর্থ বিষয়সহ মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ–৩.৫০ ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৩ লাগবে। দুটি মিলিয়ে আবার ন্যূনতম জিপিএ–৭ থাকতে হবে।

এ ছাড়া বি-২ উপ–ইউনিটের পরীক্ষা হবে ৮ জানুয়ারি। এই উপ–ইউনিটে মোট আসন ২৮৫টি। গত বছর ছিল ৩২৫টি। এ বছর আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজে ১০০টি ও পালি বিভাগে ৮৫টি আসন রয়েছে। এতে আবেদন করতেও চতুর্থ বিষয়সহ মাধ্যমিকে জিপিএ ন্যূনতম ৩.৫০ ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৩ লাগবে। দুটি মিলিয়ে আবার জিপিএ–৭ থাকতে হবে।

অন্যদিকে ডি-১ উপ–ইউনিটের পরীক্ষা হবে ৫ জানুয়ারি। এতে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগে ৪০টি আসন রয়েছে। এতে আবেদন করতে মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ–২.৫০, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–২ থাকতে হবে। দুটি মিলিয়ে আবার ৫.৫০ থাকতে হবে।

কোটায় আসন কত

এবার মোট ৯ ধরনের কোটা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১২টি আসন রাখা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এই কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয় ১১১টি আসন রাখা হয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। অন্যদিকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য ৯৪, অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ৬, অ-উপজাতি কোটা (পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি) ৫১, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা ২০, বিকেএসপি কোটা ১১, পেশাদার খেলোয়াড় কোটা ৫ ও দলিত জনগোষ্ঠী কোটা ৯টি রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পোষ্য কোটা ছাড়া বাকি কোটার আসন অপরিবর্তিত রয়েছে। এ বছর আসনও কমানো হয়েছে।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যাহ পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে ক্লাস শুরু করব। এ কারণে আসনসংখ্যা কমানো হচ্ছে। ধাপে ধাপে আসন আরও কমবে।’