মাদারীপুরে সুধী সমাবেশে অতিথিরা। মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুর পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে
মাদারীপুরে সুধী সমাবেশে অতিথিরা। মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুর পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে

তিন জেলায় সুধী সমাবেশ

সত্য প্রকাশের জন্য প্রথম আলোকে টিকে থাকতে হবে

প্রথম আলো অন্যান্য পত্রিকা থেকে আলাদা। গণমানুষের স্বার্থে পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের স্বার্থে সত্য প্রকাশের জন্য প্রথম আলোকে টিকে থাকতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সত্য প্রকাশের বিকল্প নেই। প্রথম আলোকে সেই সত্যবাণী সাহসিকতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুরে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মাদারীপুর পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। একই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাইবান্ধায় সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবেশে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।

মাদারীপুরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুর পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে

মাদারীপুর

বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। প্রথমে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি অজয় কুন্ডু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাদারীপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান জুলিয়া। অনুষ্ঠানে সহায়তা করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ করায় প্রতিদিন প্রথম আলোতে চোখ রাখেন মাদারীপুর-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় সহগণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো আমার কাছে প্রথম পছন্দের গণমাধ্যম। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রথম আলোর সঙ্গে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, যা কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো। বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় প্রথম আলো ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রথম আলোর কাছে সমাজের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের চাহিদা অনেক।’

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এনায়েত হোসেন বলেন, ‘গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। তাই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রথম আলো পালন করবে—সেই প্রত্যাশাই রাখি।’

সুধী সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাদারীপুর সরকারি ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মহাদেব বর্মণ। মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুর পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে

কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলো যখন থেকে যাত্রা শুরু করে, তখন থেকেই বাসায় প্রথম আলো রাখি। রোজ প্রথম আলো না পড়লে অপূর্ণতা থেকে যায়। কারণ, প্রথম আলো পড়ে আমরা বিশেষ কিছু পাই। প্রথম আলো যেমন মেধাবী তরুণদের নিয়ে কাজ করে, তেমনি অবহেলিত মানুষের ঘুরে দাঁড়াতে বিশেষ অনুপ্রেরণা দেয়।’

প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক নেয়ামতউল্লাহ, সাংবাদিক রিপনচন্দ্র মল্লিক, আবৃত্তি ও উপস্থাপনা সংগঠক শাহাদাত হোসেন, শিল্পকলা একাডেমির নাট্যপ্রশিক্ষক আ জ ম কামাল, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি খান মো. শহীদ, শিক্ষক মাহাবুব হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক আসাদুজ্জামান সাইফ। তাঁরা প্রথম আলোকে নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশার পাশাপাশি বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরেন।

পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, প্রথম আলো সব সময় সত্য তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটা দেশের গণমাধ্যম কতটুকু সত্য বলতে পারে, তা নির্ভর করে ওই দেশের নাগরিকদের গণতন্ত্রচর্চার ওপর। আমরা কি সব বলতে পারি? সব বলতে পারি না। আমরা যতটুকু সত্য বলতে পারি, তা অন্য কোনো গণমাধ্যম বলতে পারে না। তবু কাজ করতে গিয়ে আমাদের ভুল হয়। সেই ভুল স্বীকারও আমরা করি।’

দেশের রাজনৈতিক নানা সমীকরণ ও পটপরিবর্তনের মধ্যেও প্রথম আলো সত্য ও সাহসী সংবাদ প্রকাশের ধারা অব্যাহত রাখায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন মাদারীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক হিতেন চন্দ্র মণ্ডল, মাদারীপুর সরকারি ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মহাদেব বর্মণ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন, মাদারীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আল নোমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অনুসন্ধান) জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রথম আলো ও জেলার সংবাদপত্রের এজেন্ট ওমর আলী শিকদার প্রমুখ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে জাতি গঠনে অবদান রাখছে প্রথম আলো। রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজের অসংগতি তুলে ধরছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রথম আলো সব সময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করে। মামলা-হামলা হলেও প্রথম আলো কখনো পিছপা হয়নি।

প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশ সঞ্চালনাসহ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদৎ হোসেন। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজ, আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বন্ধুসভার সদস্য।

অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বিকাশ করেছে প্রথম আলো। প্রথম আলো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। সাহস নিয়ে প্রথম আলো আগামী দিনেও লিখবে—এই প্রত্যাশা রাখি।’

সুধী সমাবেশে প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলছেন একজন অতিথি। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলো অনেক যাচাই-বাছাই করে সংবাদ পরিবেশন করে। সত্য বলার প্রথম আলোর এই সাহসিকতা বজায় থাকুক।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নিয়াজুল করিম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রথম আলো সব সময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করেছে। বিগত সরকারের সময়ও হাসিনার দুর্নীতি ও অপরাধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে, এ জন্য প্রথম আলো এই জায়গায় পৌঁছেছে।’

সিপিবির জেলা সভাপতি সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলো স্রোতের বিরুদ্ধে লেখে। তাই প্রথম আলোর বিরুদ্ধে এত মামলা হয়েছে। এসব মামলা প্রথম আলোর জন্য আশীর্বাদ।’ জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি অরুণাভ পোদ্দার বলেন, ‘রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রথম আলো সত্যকে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রকাশ করে যাচ্ছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ছোট থেকেই প্রথম আলো আমার সঙ্গী। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে প্রথম আলো। প্রথম আলো শুধু একটি পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠান।’ সৈয়দ তৈমুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ তৈমুর বলেন, সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে প্রথম আলো হামলা-মামলার শিকার হয়েছে। কিন্তু সত্য প্রকাশে কখনো পিছপা হয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘প্রথম আলো জাতি গঠনে অবদান রাখে। প্রথম আলোর মতো অন্যদেরও কাজ করতে হবে। আমি নিয়মিত প্রথম আলো পড়ি। প্রথম আলো অনেক সৃজনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রঞ্জন চন্দ্র দে বলেন, সবাই চায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। মানুষ সঠিক তথ্য জানতে চায়। প্রথম আলো সেই কাজই করে যাচ্ছে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন তথ্য কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল আজবিন, ফাহমিদা শারমিন, অশোকা ফেলো মাতিন আহমেদ, জেলা হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির, শিক্ষক স্বপন মিয়া প্রমুখ। তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে

লাজ্জাত এনাব মহছি বলেন, ‘পাঠকই প্রথম আলোর প্রাণশক্তি। তাই প্রথম আলো দুটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। পাঠকের কারণেই প্রথম আলো এত দূর এসেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেশের মোট পাঠকের ৫৭ শতাংশ পাঠক প্রথম আলো পড়ে। আমাদের ফ্যাক্ট চেক বিভাগ আছে। তারা সত্য তুলে ধরছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন ফেসবুক সাংবাদিকতার মাধ্যমে অপসাংবাদিকতার শিকার হচ্ছি। অনেক সময় ফেসবুকে ফেক নিউজ থাকে। সেগুলো আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রথম আলো সব সময় সত্য উদ্‌ঘাটন করে প্রকাশের চেষ্টা করে।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন মো. নোমান মিয়া, জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিরুপা ভৌমিক, সনাকের জেলা সভাপতি আবদুন নূর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম, সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেলিভিশন সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলামিন শাহীন, এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়ক আজিজুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এ বি এম মমিনুল হক, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ মিরন্নাহার বেগম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাইনুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান নূর মোহাম্মদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, জেলা শিশু একাডেমির মাহফুজা আখতার, অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন সরকার, গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ, সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শামীমা সিকদার, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাবেকুন্নাহার রীমা, জেলা জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুনীল বণিক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল বণিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আল আমিন, একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামাল আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজ এবং আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্যোক্তা হারুন অর রশিদ ও শাহীন মৃধা, সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আহারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খান, খেলাঘরের জেলার সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন সরকার, জেলা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আল মামুন, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক চৌধুরী, সংস্কৃতিকর্মী হৃদয় কামাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পত্রিকার এজেন্ট আশিকুল ইসলাম, তরী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শামীম আহমেদ ও সদস্য সোহেল রানা, প্রথম আলোর সরাইল প্রতিনিধি বদর উদ্দিন প্রমুখ।

গাইবান্ধায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে

গাইবান্ধা

গণমাধ্যমের কাছে মানুষ সঠিক তথ্য জানতে চায়। প্রথম আলো সত্য ও সঠিক তথ্য প্রচার করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে। বিগত তিনটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তখন গণমাধ্যমে সঠিক খবর আসেনি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সঠিক খবর প্রথম আলো তুলে ধরবে—এটাই পাঠকদের প্রত্যাশা।

মঙ্গলবার গাইবান্ধায় প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সহায়তা করে গাইবান্ধা শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সু-প্যালেস ও গাইবান্ধা বন্ধুসভা। বিকেল পৌনে চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বন্ধুসভার সহসভাপতি মেহেদী হাসান ও সদস্য কাশফিহা খানমের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন।

শিক্ষাবিদ মাজহারউল মান্নান বলেন, সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে প্রথম আলো। প্রথম আলোর মাধ্যমে পাঠক একটি বিশ্বমানের দৈনিকের স্বাদ পায়। দেশ ও জাতির সংকটকালে নানা প্রতিকূলতা ও বিভ্রান্তির মধ্যেও সৎ, নিরপেক্ষ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর রাখছে প্রথম আলো।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাবেক সহকারী সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের প্রার্থী মিহির ঘোষ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এ দেশকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই। প্রথম আলো নিশ্চয়ই সত্য, ন্যায় ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকবে, সেই সঙ্গে স্থানীয় দাবি-দাওয়াসহ সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রথম আলো অবস্থান গ্রহণ করবে—এটাই পার্টির পক্ষ থেকে আমার প্রত্যাশা।’

জেলা জামায়াতের আমির ও গাইবান্ধা-২ আসনের প্রার্থী মো. আবদুল করিম বলেন, ‘জাতির কাছে যা কিছু ভালো তা তুলে ধরতে হবে। আমরা আশা করি, প্রথম আলো বিগত সময়ে যে ভূমিকা রেখেছে এবং সামনে যে সময় এসেছে, তাতেও সেই ভূমিকা রাখবে। আগামী নির্বাচন যেন সবার জন্য গ্রহণযোগ্য হয়, এ জন্য আমি প্রথম আলোর ভূমিকা আশা করি।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুন নবী বলেন, ‘আমি আশা করব, আগামী দিনে প্রথম আলো বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবে। এই জাতিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে।’

গাইবান্ধায় প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রশ্ন করছেন পাঠক। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা পরিষদ হলরুমে

উন্নয়নকর্মী আশরাফুল আলম বলেন, ‘ভুক্তভোগীর কথা কোট করে প্রথম আলো যে সংবাদ প্রকাশ করে, সেটা ভালো লাগে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রান্তিক নারীদের কর্মযজ্ঞকে তুলে ধরার ধারাবাহিকতা প্রথম আলো অব্যাহত রাখবে—এই প্রত্যাশা রাখি।’ জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি জহুরুল কাইয়ুম বলেন, ‘প্রথম আলো যুক্তির জায়গাগুলোতে খুব শক্ত। যে বিষয় উপস্থাপন করে, সেটা এত যুক্তিসংগতভাবে করার চেষ্টা করে, যাঁরা তাদের মতের বিরোধিতা করেন, তাঁরাও কনফিউজড হয়ে যান। প্রথম আলোর শক্তির দিক এটা।’

গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলো পাঠকসমাজকে জয় করেছে। প্রথম আলো জনগণের সঙ্গে ছিল, জনগণের কথা বলেছে।

সত্য তথ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফিহাদুর রহমান বলেন, ‘মানুষ দিন শেষে অপেক্ষা করে প্রথম আলোতে কী লেখা হয়েছে। বিশ্বাসের এ জায়গা ধরে রাখতে হবে প্রথম আলোকে।’

সমাবেশে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যাদব সরকার বলেন, প্রথম আলো সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনেই সংবাদপত্র প্রকাশ করছে। বর্তমানে পাঠকসংখ্যা কমে যাচ্ছে। পাঠক না থাকলে সমাজের জন্য পত্রিকা ভালো কিছু বয়ে আনবে না। প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন বন্ধুসভাকে আরও সক্রিয় করে স্কুলপর্যায়ে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রথম আলোর বিভিন্ন বিভাগে লেখেন শিক্ষক ও লেখক রঞ্জু খন্দকার। তিনি প্রথম আলোয় আরও বেশি বেশি আঞ্চলিক সংবাদ ছাপানোর ওপর গুরুত্ব দিতে এবং প্রাথমিক শিক্ষার সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে বেশি করে সংবাদ প্রকাশের দাবি জানান।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লক্ষণ কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) শেখ মুত্তাজুল ইসলাম।

সমাবেশ শেষে সুধীজনের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর আঞ্চলিক সংবাদবিষয়ক সম্পাদক তুহিন সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির পরিবর্তনটা মাথায় রেখে আমরা পত্রিকা সাজাচ্ছি। অনলাইনকে আরও গতিশীল করছি। সঠিক খবর দ্রুত সময়ে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ আমাদের সব সময় থাকে। পাঠকের ভালোবাসাই আমাদের শক্তি।’

সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমির মো. আবদুল করিম। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা পরিষদ হলরুমে

সুধী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও সু-প্যালেসের মালিক আবুল হোসেন মৃধা, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আফরোজা বেগম, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি জিয়াউল হক, গাইবান্ধা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান, পরিবেশ আন্দোলনের ওয়াজিউর রহমান, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির ও আমিরুল ইসলাম, কলেজশিক্ষক ফেরদৌস ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, সংস্কৃতিকর্মী মোদাচ্ছেরুজ্জামান, সংগীতশিল্পী চুনি ইসলাম, আইনজীবী আনিস মোস্তফা, ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ, নাট্যকর্মী আলমগীর কবির, শাহ আলম, রেডিও সারা বেলার স্টেশন ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান, কবি খোন্দকার নিপন, পিটু রশিদ, মানিক বাহার, নাসরিন রেখা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।