সিলেটের উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রের পাশে আদর্শগ্রাম থেকে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়
সিলেটের উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রের পাশে আদর্শগ্রাম থেকে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়

সিলেটে এবার উদ্ধার হলো উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রের দুই লাখ ঘনফুট পাথর

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্র থেকে লুট হওয়া প্রায় দুই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার টাস্কফোর্স ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে উৎমাছড়া-সংলগ্ন গ্রাম থেকে ওই পাথর উদ্ধার করা হয়।

কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পর আলোচনায় ছিল উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্র। গত জুনে ঈদের ছুটিতে উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের না যাওয়ার অনুরোধ করে ভিডিও ধারণ করেছিলেন স্থানীয় আলেম-ওলামা পরিচয় দেওয়া একদল যুবক। কারণ হিসেবে এলাকার পরিবেশ নষ্ট ও অশ্লীল কার্যকলাপের অভিযোগ করা হয়েছিল। তখন অভিযোগ উঠেছিল, উৎমাছড়ার পাথর লুটপাট করতেই পর্যটকদের সেখানে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এবার সেই উৎমাছড়া থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করল টাস্কফোর্স।

আজ সপ্তম দিনের মতো যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্সের অভিযানে পাথরের পাশাপাশি বালু উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অভিযানে ২ লাখ ১৪ হাজার ঘনফুট পাথর ও ২৮ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে।

অভিযান সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের উৎমাছড়া-সংলগ্ন আদর্শগ্রামে আজ বেলা ১১টার দিকে অভিযান চালায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮) সদস্যরা। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক। এ সময় আদর্শগ্রাম থেকে প্রায় দুই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়। পরে সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইফ্রাহিম ইকবাল চৌধুরীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্স অভিযান চালায়।

ইফ্রাহিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, আদর্শগ্রামে রাস্তা ও বিভিন্ন বাড়িঘরে পাথরগুলো রাখা ছিল। পাথরগুলোর মধ্যে পুরোনো ও সম্প্রতি তোলা মিশ্রণ রয়েছে। পাথরগুলো উৎমাছড়া থেকেই উত্তোলন করা। আগে উৎমাছড়া পাথর কোয়ারি উন্মুক্ত ছিল। তবে বর্তমানে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, উদ্ধার করা পাথরগুলো স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির জিম্মায় রাখা হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাথরগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে গোয়াইনঘাটের জুমপার এলাকা থেকে আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার হওয়া পাথরগুলো জাফলং জিরোপয়েন্ট এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অভিযান শুরুর পর থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ঘনফুট পাথর সাদাপাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুরে টাস্কফোর্সের অভিযানে প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর ও ২৮ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া জৈন্তাপুরের ইউএনও জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, জব্দ করা বালুগুলো ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকায় উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। পাথরগুলোর মধ্যে কিছু পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বাকিগুলো বিজিবি সদস্যদের জিম্মায় রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (জেএম শাখা, সীমান্ত শাখা) মো. পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটে উদ্ধার করা পাথরের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সাদাপাথরে। বাকিগুলো জাফলং ও জৈন্তাপুরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা ছাড়া সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। বিগত পাঁচ বছরে তাঁরা নানাভাবে কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় রাতে লোকজন অবৈধভাবে পাথর তুলতেন। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা এক বছর দেদার পাথর লুটপাট চলে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ছিল নির্বিকার। এতে সংরক্ষিত এলাকা, পর্যটনকেন্দ্র ও কোয়ারিগুলোর পাথর একসঙ্গে লুট করে নেওয়া ঠেকানো যায়নি।