নোয়াখালীর হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের সাইফুল মার্কেটে ঐক্য ও সংহতির সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়
নোয়াখালীর হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের সাইফুল মার্কেটে ঐক্য ও সংহতির সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগকে ‘ভুয়া’ ও ‘ভারতের ষড়যন্ত্র’ মনে করেন হান্নান মাসউদ

পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিক্ষোভ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার পর জেলাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ধর্ষণের ঘটনাটি ‘ভুয়া’ বলে মন্তব্য করেছেন।

আবদুল হান্নান মাসউদের ভাষ্য, পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ভারত শেষ ট্রাম্প কার্ড খেলে এটিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। একটা ভুয়া ধর্ষণের মধ্য দিয়ে তারা পাহাড়ি ও বাঙালিদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের সাইফুল মার্কেটে ঐক্য ও সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বক্তব্যে আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। ভারত আমাদের পার্বত্য অঞ্চল কেড়ে নিতে চায়। আমরা আমাদের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছেড়ে দেব না। ১৯৭১ সালে যেমন পাকিস্তানের মোকাবিলা করেছি, তেমনি ২০২৫ সালে ভারতের মোকাবিলা করব।’

খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজারের কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। বাজারে পুড়ে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল। রোববার দুপুরে

হান্নান মাসউদের বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আবারও বলছি, একটি ধর্ষণের ঘটনাকে সামনে এনে পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। ধর্ষণ ভয়াবহ অপরাধ, এর জন্য অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকে দিচ্ছেন, পাহাড়কে অশান্ত করার মতো ঘৃণ্য কাজে ফুয়েল দিচ্ছেন, তারা সুশীল না, তারা দেশদ্রোহী।’

এদিকে হান্নান মাসউদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া এবং খাগড়াছড়ির ঘটনায় এনসিপির নীরবতার কারণে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলিক মৃ। আজ দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

অলিক মৃ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাগড়াছড়ি জেলার ২৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা নিয়ে এনসিপির খাগড়াছড়ি জেলার প্যাডে একটা বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে শিরোনামে ধর্ষণের ঘটনার কথা না থাকলেও সেনাবাহিনীর ওপর হামলা ও তাদের গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানানো হয়। এনসিপির গ্রুপে গতকাল আমি এই বিবৃতির বিষয়ে জবাব চেয়েছি। পরে ই-মেইলও করেছি। আজ সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো জবাব পাইনি। আবার এক কর্মসূচিতে এনসিপির নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনাটি ভুয়া। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে আমি বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করেছি।’

বিক্ষোভ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির গুইমারায় গতকাল গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া উপজেলাটিতে ১৩ সেনাসদস্য ও ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকালের সহিংসতার পর খাগড়াছড়িতে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তার ও বিচারসহ আট দফা দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় চলছে জুম্ম-ছাত্র জনতার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। এ ছাড়া প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা অব্যাহত আছে।

খাগড়াছড়ি শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান

অবরোধের কারণে খাগড়াছড়িতে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। আজ সকাল আটটার দিকে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ঘুরে দেখা যায়, সড়কে দু-একটি অটোরিকশা চলাচল করছে। বন্ধ আছে দোকানপাট। মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। এক-দুজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে দেখলেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম-ছাত্র জনতার ব্যানারে গত শনিবার ভোর পাঁচটায় অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।