গভীর রাতে বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গতকাল রাতে জেলা সার্কিট হাউস মাঠে
গভীর রাতে বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গতকাল রাতে জেলা সার্কিট হাউস মাঠে

বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন, ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট

বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার রাত একটার দিকে জেলার সার্কিট হাউস মাঠের পূর্ব পাশে স্থাপিত ওই স্মৃতিস্তম্ভে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এমন পরিস্থিতিতে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বরগুনা শাখার সভাপতি রেজাউল কবির গতকাল গভীর রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেওয়াসহ বিভিন্ন সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধচেষ্টার একাধিক ভিডিও পোস্ট করেছেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কাঠি জ্বালিয়ে জেলার জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন নিক্ষেপ করছেন এক যুবক। এর কিছুক্ষণ পরেই সেখানে আগুন জ্বলে ওঠে।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আগুন দেওয়ার চিহ্ন আছে। স্তম্ভটি স্টিলের কাঠামোয় নির্মিত হওয়ায় আগুনে তেমন ক্ষয়–ক্ষতি হয়নি। তবে স্মৃতিস্তম্ভের পূর্ব পাশের নিচের দিকে একটি অংশ আগুনের তাপে কালচে হয়ে গেছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, বরগুনা সদর উপজেলা বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের হেউলিবুনিয়া এলাকায় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন দেওয়া হয়।
এসব বিষয়ে জানতে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াকুব হোসাইনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, সদর থানা এলাকায় দুটি স্থানে গতকাল রাতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ছাত্রলীগ নেতাদের ভিডিওতে আগুন ও অবরোধ চেষ্টার দৃশ্য

বেতাগী উপজেলার বরগুনা-বাকেরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ অন্তত তিনটি স্থানে গতকাল গাছ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব কর্মকাণ্ডের পর সড়কে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিফাত সিকদার নিজের ফেসবুক আইডিতে গতকাল অবরোধচেষ্টার কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, কাঠে পেট্রল ঢেলে মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ভিডিওতে কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায়নি।

বেতাগী থানার ওসি মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘বেতাগীতে গতকাল কোনো ধরনের আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আমরা সারা রাত পাহারায় ছিলাম।’

লকডাউনের পক্ষে আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানো হচ্ছে—এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বরগুনা জেলা শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি।

এ বিষয়ে আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ‘আমতলীর কোথাও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউনের সমর্থনে পোস্টার লাগানোর কথা শুনেছি।’

বরগুনা বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কপথের সব বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ সকালে তোলা

বাস চলাচল বন্ধ

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরগুনা বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কপথের সব বাসের চলাচল বন্ধ আছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে বাস মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, যাত্রী–সংকটের কারণে তাঁরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।

বাস টার্মিনালে কথা হয় মাসুম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার জন্য সকালে বাড়ি থেকে বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখি, বাস চলাচল বন্ধ। বিষয়টি আগেই আমাদের জানানো উচিত ছিল। তাহলে সময় ও টাকা দুটিই বাঁচত।’

বরগুনা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমরা বাস চলাচল বন্ধ করিনি। মানুষ যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন। তাই যাত্রী না থাকায় সব বাসের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’