চট্টগ্রাম নগরের বিপ্লব উদ্যানে মেলার জন্য নাগরদোলা বসানোর প্রস্তুতি চলছে। আজ বেলা তিনটায়
চট্টগ্রাম নগরের বিপ্লব উদ্যানে মেলার জন্য নাগরদোলা বসানোর প্রস্তুতি চলছে। আজ বেলা তিনটায়

চট্টগ্রামে উদ্যানে যুবদল নেতার বিজয় মেলা, অনুমতি দিল সিটি করপোরেশন

চট্টগ্রাম নগরের সবুজে ঘেরা বিপ্লব উদ্যানের মাঝখানে বসানো হয়েছে বিশাল লোহার চাকতি। এর পাশে চলছে নাগরদোলা, রোলারকোস্টারসহ বিভিন্ন রাইড বসানোর কাজ। খোলা জায়গায় ইতিমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ৩৬টি অস্থায়ী দোকানের কাঠামো। বিপ্লব উদ্যানে এভাবেই চলছে ‘জুলাই বিজয় মেলার’ প্রস্তুতি।

‘ছাত্রসমাজ চট্টগ্রাম মহানগর’ ব্যানারে আয়োজন করা হচ্ছে ১৫ দিনব্যাপী এ মেলা। এর মূল আয়োজক নগর যুবদল নেতা আলিফ উদ্দিন ও তাঁর অনুসারীরা। তিনি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভেঙে দেওয়ার পর নগর যুবদলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি।

দোকান বসানো অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। আজ বিকেলে

গতকাল বুধবার রাতে শুরু হয়েছে মেলার অবকাঠামোর কাজ। মেলার আয়োজকদের দাবি, সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে জায়গা ব্যবহারে অনুমতি নিয়েছেন। মেলার অনুমতি নিয়েছে পুলিশের কাছ থেকেও। শনিবার মেলার উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।

উদ্যানে এভাবে মেলার অনুমতি দেওয়ার সমালোচনা করে এই উদ্যোগ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপত্য ও নগর-পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যানে বেশ কয়েক বছর আগে নাগরিক সমাজের মতামতকে উপেক্ষা করে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি শুরু হয়েছিল। নতুন মেয়র আসার পর আমরা আশা করেছিলাম সেগুলো অপসারণ করে গণপরিসরকে সবুজায়ন করা হবে। কিন্তু তা না করে এখন বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উদ্যানটি দেওয়া হচ্ছে। নাগরিকদের স্থানগুলো কংক্রিট স্থাপনা ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরি।’

১৯৭৯ সালে ব্যস্ততম ২ নম্বর গেটে গাছগাছালিতে ভরা দুই একরের এ উদ্যান গড়ে তোলা হয়। এরপর নানা সময়ে এটিতে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সবশেষ গত বছরের শেষের দিকে উদ্যানের কিছু স্থাপনা ভেঙে সমান করা হয় উদ্যান। নগরের ২ নম্বর গেট, প্রবর্তক, জিইসিসহ আশপাশের মানুষ সময় কাটাতে ও সকালে শরীরচর্চায় এ উদ্যানে আসেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, উদ্যানের মাঠের মাঝখানে রাইডের জন্য অবকাঠামো বসানো হয়েছে। উদ্যানের তিন পাশে চলছে অস্থায়ী দোকানের জন্য বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে কাঠামো নির্মাণের কাজ। উদ্যানজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে লোহার খুঁটি, বাঁশ, রাইডের যন্ত্রাংশ। কাজ তদারক করছেন কয়েকজন।

সেখানে উপস্থিত কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম বলেন, এটি জুলাই বিজয় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ১৫ দিনব্যাপী মেলা হবে। দুই লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে জায়গার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। মেয়র নিজেই অনুমতি দিয়েছেন।

উদ্যানে মেলার অনুমতির বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামালকে ফোন করা হলে তিনি বর্তমানে ঢাকায় আছেন বলে জানান। তবে সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, অনুমতি নিয়েছেন আলিফ উদ্দিন নামের একজন। ছাত্রসমাজের ব্যানারে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

আলিফ উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আয়োজক নন। ‘ছোট ভাইয়েরা’ আয়োজন করেছেন। তিনি কেবল অনুমতি নিয়ে দিয়েছেন। ছাত্রসমাজ চট্টগ্রামের সুজন ও ফয়সাল নামের দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি।

তবে দায়িত্বে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মো. সুজন। তাঁকে পাওয়া গেল বিপ্লব উদ্যানে। মেলার কাজ তদারক করছিলেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্বে আলিফ উদ্দিন ভাই আছেন। আমি মেলার সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার বিষয়গুলো দেখছি শুধু।’

বিপ্লব উদ্যানের এক পাশে আগে থেকেই কংক্রিটের স্থাপনা রয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিপ্লব উদ্যানে কংক্রিট অবকাঠামোর পরিমাণ ৫৫ শতাংশ। অথচ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, উদ্যানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের বেশি কংক্রিট অবকাঠামো থাকতে পারবে না। আর আন্তর্জাতিকভাবে ২ শতাংশও অনুমোদন করে না।

জানতে চাইলে সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই-আগস্টের ছবি প্রদর্শন করবে বলায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্য মেলা দেওয়ার সুযোগ নেই। তা ছাড়া আন্দোলনে আলিফ উদ্দিনের অবদান ছিল। আর মাঠে এক মাস পর কাজ শুরু হবে। এখন ফাঁকা ছিল, তাই দুই সপ্তাহের মেলা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এ ধরনের আয়োজন উদ্যান ধ্বংস করার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিকদের নিশ্বাস ফেলার, বসার একটি উদ্যান এটি। এটিও ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে।