রাজশাহী নগরের নর্দমার কাদা তুলে এভাবেই সড়কের পাশে শুকিয়ে নেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় একজন কাদার ওপরে কলাগাছ লাগিয়ে দেন
রাজশাহী নগরের নর্দমার কাদা তুলে এভাবেই সড়কের পাশে শুকিয়ে নেওয়া হয়। কয়েক দিন আগে নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় একজন কাদার ওপরে কলাগাছ লাগিয়ে দেন

রাজশাহীর সড়কে ড্রেনের কাদা, ধুলায় মিশছে ভয়ংকর জীবাণু

রাজশাহী নগরে ড্রেনের কাদা তুলে রাস্তার ওপরে শুকানোর জন্য রেখে দেওয়া হয়। সেই কাদা শুকিয়ে যখন প্রায় ধুলা-ধুলা হয়ে যায়, তখন তুলে নিয়ে নর্দমায় ফেলে দিয়ে আসা হয়। এটা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দীর্ঘদিনের চর্চা।

এবার এই ধুলা শুকানোর আগেই নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় রাস্তার ওপরে তুলে রাখা কাদার ওপরে দুটি কলাগাছ লাগিয়ে দিয়েছেন কেউ। যিনি কলাগাছ দুটি লাগিয়েছেন, তিনিও জানেন ময়লা তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলাগাছও উঠে যাবে। তারপরও কী মনে করে এমন করলেন, রসিকতা নাকি প্রতিবাদ, জানার জন্য ওই ব্যক্তিকে কল করলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী এম মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ড্রেনের পানিতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলা হয়, যা পুড়িয়ে ফেলার কথা। সেই সঙ্গে মনুষ্য বর্জ্যও গিয়ে মিশছে। এতে কোলিফরম, সালমোনেলা, ইকোলি ও সিগেলা জাতীয় ভয়ংকর সব ব্যাকটেরিয়া থাকে, যার ভেতরে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সব রোগ-জীবাণু থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া ডায়রিয়া, আমাশয়, ক্রিমিসহ যাবতীয় পেটের পীড়ার জীবাণু বহন করে।

এই উদ্ভিদবিজ্ঞানী বলেন, ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলার হাত থেকে বাঁচার জন্য সারা পৃথিবীতে সুয়ারেজ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। রাজশাহীতে যেভাবে এই বর্জ্য শুকিয়ে তারপর সরানো হচ্ছে, তাতে নগরবাসীর মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ট্রাকে পলিথিন ব্যবহার করে সঙ্গে সঙ্গে এই বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। দেশের অনেক মানুষই ৭০–৭৫ বছর পর্যন্ত বাঁচছেন, কিন্তু তাঁরা কর্মক্ষম থাকতে পারছেন না। এটা হচ্ছে খাদ্যের জন্য। আমাদের নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থা—এই সব কারণে ধ্বংস হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ফয়সল আলম বলেন, বর্জ্য সরাসরি অপসারণ করা উচিত। এতে রাস্তায় চলাচল করতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। আবার শুকিয়ে ধুলা হয়ে বাতাসে মিশছে, যা শ্বাসকষ্টের বা অ্যাজমা রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।

সিটি করপোরেশন বলছে, নগরে ১০০ কিলোমিটারের বেশি ছোট ড্রেন আছে। এই ড্রেনের কাদা এভাবেই তুলতে হবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমাদের তো আর কোনো বিকল্প নেই। এগুলো ছোট ড্রেন, এগুলোতে এক্সকাভেটর ব্যবহার করা যায় না।’

২০১৬ সালের ১৭ জুন দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বায়ুদূষণ কমানোয় রাজশাহীকে বিশ্বের সেরা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে নগরের তালাইমারী মোড়, এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর (রেলগেট), সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর মোড়, বিসিক মঠপুকুর ও বন্ধ গেট এলাকায় বায়ুর পরীক্ষা চালানো হয়। এর আগে ২০২২ ও ২০২৩ সালে নগরের পাঁচটি জায়গায় বায়ুর মানের পরীক্ষা চালায় সংগঠনটি। তাদের পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, শহরটিতে ক্রমেই বায়ুদূষণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহীর সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, নির্মল বাতাসের জন্য রাজশাহী বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই শহরের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নির্বিঘ্নে চলাচল ও সৌন্দর্য সুরক্ষার জন্য ড্রেনের বর্জ্য অপসারণ সরাসরি কাভার্ড ট্রাকের মাধ্যমে করা উচিত।