বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদে মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। আজ রোববার দুপুরে
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদে মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। আজ রোববার দুপুরে

নির্বাচনে যে-ই জিতুক, জাতি হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান

আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে দল বা জোট বিজয়ী হোক না কেন, জাতি হিসেবে সবাই মিলে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে—এমন মন্তব্য করেছেন সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যেন একটি উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং মানুষ নির্বিঘ্নে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন—এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যাশা।

আজ রোববার দুপুরে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মাণাধীন মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমাদের চাওয়া একটাই—নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ যাতে ভয়ভীতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আগের মতো কেউ যেন ভোটকেন্দ্র দখল করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। অন্তর্বর্তী সরকার কেবল নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে, যাতে তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।

মীরগঞ্জ সেতু প্রসঙ্গে সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন সময় নানা কোন্দল ও জটিলতার কারণে এই সেতুর বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে। এখন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি সময়মতো ও গুণগত মান বজায় রেখে বাস্তবায়নের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফাওজুল কবির খান আশাবাদ জানিয়ে বলেন, মীরগঞ্জ সেতু নির্মিত হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির পুনর্জাগরণ ঘটবে, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও সৌহার্দ্য বাড়বে, পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষির বিকাশে নতুন গতি আসবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, মীরগঞ্জ সেতু নির্মিত হলে এ অঞ্চলের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। তবে নির্মাণকাজে কোনো ধরনের অনিয়ম, পুকুর চুরি বা নদী চুরি যেন না হয়, সে বিষয়ে স্থানীয়দের নজরদারি রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি জনগণের আমানত। সেই আমানত রক্ষা করে সেতুর কাজ করতে হবে। অনেক সময় প্রকল্পের কাজ ও সুযোগ পাওয়া নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা কাজের মান ও নির্মাণের সময়সীমার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।’

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্থানীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

১ হাজার ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য মীরগঞ্জ সেতুটি আড়িয়াল খাঁ নদে তৃতীয় সেতু হতে যাচ্ছে। এর আগে এই নদীর ওপর ঢাকা-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের শিবচর এবং চাঁদপুর-শরীয়তপুর-মাদারীপুর মহাসড়কে দুটি সেতু নির্মিত হয়েছে। মীরগঞ্জ সেতু নির্মিত হলে এটি মুলাদি ও হিজলা উপজেলাকে সরাসরি বরিশাল নগর এবং জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে। একই সঙ্গে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা হবে আরও সহজ ও নির্বিঘ্ন।

১ হাজার ৪৮৪ মিটার দীর্ঘ মীরগঞ্জ সেতুটি চট্টগ্রামের দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ও বরিশালের পায়রা সেতুর আদলে নির্মিত হবে। এতে থাকবে দুটি অ্যাবাটমেন্ট, ১৭৫ মিটারের দুটি এবং ৯৭ মিটারের দুটি পিয়ারসহ ৫৪৪ মিটার মূল সেতু অংশ। এ ছাড়া ৯৪০ মিটার দীর্ঘ ভায়াডাক্ট যুক্ত থাকবে। সেতু ও ভায়াডাক্ট মিলিয়ে মোট পিয়ারের সংখ্যা হবে ৩০।

সেতুর দুই পাশে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। টোল প্লাজাসংলগ্ন অংশে রিজিড পেভমেন্ট এবং অবশিষ্ট ৩ হাজার ৯৭৩ মিটার অংশে ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।