
ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকায় লম্বালম্বিভাবে পাকা দেয়ালের টিনশেডের সামনে শাটার দেওয়া বেশ কয়েকটি কক্ষ। কক্ষগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ দোকানের শাটার নামিয়ে তালা দিয়ে রাখা। একটিতে মুদিদোকান। পাশের কক্ষটি একটি মানবাধিকার সংস্থা ব্যবহার করছে, এমনটিই জানেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তবে ওই সংস্থার আশুলিয়া শাখার সভাপতি জানান, কক্ষটি একই সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টিরও কার্যালয়।
তবে কক্ষটির কোথাও দলটির সাইনবোর্ড বা দলীয় কোনো প্রচার-প্রচারণার লিফলেট, ব্যানার ও ফেস্টুনের দেখা মেলেনি। দলটির নেতাদের সহায়তা ছাড়া এ কার্যালয় খুঁজে পাওয়া মুশকিলের।
রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধনের জন্য বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি দল বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টি ও মৌলিক বাংলার কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সাভার উপজেলার আশুলিয়ার পৃথক দুটি স্থানে। গতকাল মঙ্গলবার আশুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টির কার্যালয়ে গিয়ে এমন তথ্য ও চিত্র পাওয়া যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশুলিয়ার বাসস্ট্যান্ড থেকে বাইপাইল এলাকার দিকে সামান্য এগোলেই সড়কের বাঁ পাশে মাঝিপাড়া। ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তির কাছে বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টির ঠিকানা জানতে চাওয়া হলে কেউ দলটি চেনেন না বলে জানান। মুঠোফোনে দলের নেতাদের সহায়তা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হলেও তাঁরা দলটি চিনতে পারেননি। পরে মো. খাইরুল আলম নামের এক ব্যক্তি এসে পাকা দেয়ালের টিনশেডের একটি কক্ষের সামনের শাটারের তালা খুলে জানান, এটিই দলটির কার্যালয়।
মো. খাইরুল আলম বলেন, তিনি দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি। এই অফিস বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টি ব্যবহার করে। ওই পার্টির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত। কমিটিতে পদের জন্য নাম দেওয়া হয়েছে বলে একবার তাঁকে বলা হয়েছিল। তবে পরে কী পদ দেওয়া হয়েছে বা দেওয়া হয়নি, সেটি এখনো জানানো হয়নি।
ছোট আকৃতির ওই কক্ষের ভেতরের দিকের একটি দেয়ালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আশুলিয়া থানা কমিটির একটি ব্যানার ঝোলানো। একটি বড় চেয়ার, ছয়টি প্লাস্টিকের চেয়ার, একটি টেবিল, একটি সিলিং ফ্যান ও দুটি লাইট আছে কক্ষটিতে। ওই কক্ষের পাশের একটি কক্ষে আছে মুদিদোকান। বাকিগুলো তালাবদ্ধ।
মুঠোফোনে বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টির সভাপতি মো. আবু তাহের খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঝিপাড়ায় অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছি। ওখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার অফিসেই আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি। ওখানে সব সময় আমরা থাকি না, মাঝে মাঝে যাই। আমরা মূলত ভূমিহীনদের নিয়ে কাজ করি। বৃহত্তর ভূমিহীন রংপুর সমিতির অনুসারী হিসেবে আশুলিয়ায় কার্যক্রম চালাচ্ছি। ২০১৪ সাল থেকে আমরা কাজ করছি।’
এদিকে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে মৌলিক বাংলা। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় নিক্কন হাউজিংয়ে। প্রথম দফায় ওই হাউজিংয়ে গিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে দলটির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হলে তাঁরা দলটিকে চেনেন না বলে জানান। পরে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দলের কার্যালয়টি দেখিয়ে দেন। তবে তাঁর কাছে চাবি না থাকায় তালাবদ্ধ কার্যালয়ের ভেতরটি দেখা সম্ভব হয়নি।
বাইরে থেকে দেখা যায়, কার্যালয়টি একটি পাকা দেয়ালে টিনশেডের একটি কক্ষের। কার্যালয়টি তালাবদ্ধ। নেই কোনো দলীয় সাইনবোর্ড। ওবায়দুর রহমান দাবি করেন, সাইনবোর্ড ছিল কিন্তু ভেঙে যাওয়ায় ঘরের ভেতরে রাখা হয়েছে। ভেতরে চারটি চেয়ার, দুটি টেবিল ও কিছু বসার বেঞ্চ আছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মৌলিক বাংলার সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ২০১৭ সালে নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। ওই সময় ঠিকানা হিসেবে আশুলিয়ার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাদের কোণঠাসা অবস্থায় রাখা হয়েছিল। এ কারণে আশুলিয়ায় অফিসটি রাখা হয়। এখন সময় ও পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় কার্যালয়টি স্থানান্তর করা হচ্ছে। আরও কিছু কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে আমাদের জমা দিতে হবে, সেখানে নতুন ঠিকানাটি উল্লেখ করা হবে।’