
থ্যালাসেমিয়া নিয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই তাঁদের এই যাত্রা। ১০ দিন আগে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জিরোপয়েন্ট থেকে থেকে রওনা দেন তাঁরা। আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত দুজন সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ছিলেন।
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে হেঁটে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন দুই তরুণ। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই তাঁদের এই যাত্রা। ১০ দিন আগে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জিরোপয়েন্ট থেকে থেকে রওনা দেন তাঁরা। আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত দুজন সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ছিলেন।
দুই তরুণ হলেন হাসান মুরাদ ও মাহমুদুল হাসান। হাসান মুরাদের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় এবং মাহমুদুল হাসান নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বাসিন্দা। তাঁরা দুজন একটি ট্যুর গ্রুপ পরিচালনা করেন।
আমাদের পদযাত্রায় যেখানেই সুযোগ হচ্ছে মানুষকে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে জানাচ্ছি। ১০ জন মানুষও যদি আমাদের প্রচারণা থেকে উপকৃত হন, সেটিই আমাদের সফলতা।হাসান মুরাদ
আজ সকালে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের ফকিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করছেন মুরাদ। এই রোগের বিষয়ে প্রচারপত্র মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
হাসান মুরাদ বলেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। ‘সিবিবি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছায় রক্ত দেন। এরই সূত্র ধরে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। এরপর থেকে এই রোগের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে আসছেন। সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবেই হেঁটে দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা নেন তিনি।
মুরাদ বলেন, ‘১৭ অক্টোবর সকালে টেকনাফ থেকে রওনা দিয়ে গতকাল রোববার সীতাকুণ্ডে পৌঁছাই। গতকাল রাতে উপজেলার বাড়বকুণ্ডে একজনের বাড়িতে রাতযাপন শেষে আজ সকালে আবারও যাত্রা শুরু করেছি। আমাদের পদযাত্রায় যেখানেই সুযোগ হচ্ছে মানুষকে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে জানাচ্ছি। ১০ জন মানুষও যদি আমাদের প্রচারণা থেকে উপকৃত হন, সেটিই আমাদের সফলতা।’
হাসান মুরাদ সীতাকুণ্ড পৌর সদরে যাঁদের হাতে প্রচারপত্র তুলে দিয়েছেন তাঁদের একজন মো. সবুজ। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি মারাত্মক রোগের কথা জানতামই না। আমি নিজে যেমন বিষয়টি জেনেছি, অন্যদেরও এ বিষয়ে জানাব।’
যাত্রাপথে পরিচিত লোকজনের বাসাবাড়িতেই রাতযাপন করছেন বলে জানান হাসান মুরাদ। তিনি বলেন, ‘ট্যুর গ্রুপ ও রক্তাদাতাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সূত্রে দেশজুড়েই পরিচিত লোকজন আছে। সেখানেই আপাতত রাত কাটাচ্ছি। তবে কোথাও পরিচিতজন কাছাকাছি এলাকায় না থাকলে হোটেলে থাকব।’
‘থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ক্যাম্পেইন বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে আগেও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন হাসান মুরাদ। সংগঠনটির প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহেদ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হাসান মুরাদ এবং মাহমুদুলরা অনেক উদ্যমী। তাঁরা মানুষের দুর্যোগে, রক্তের প্রয়োজনে সব সময় পাশে থাকেন। দেশজুড়ে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য তাঁদের উদ্যোগ প্রশংসাজনক।
থ্যালাসেমিয়া প্রসঙ্গে শাহেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দিন দিন বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগী বাড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়া বাহক। সবচেয়ে বেশি থ্যালাসেমিয়ার বাহক পার্বত্য অঞ্চলে, যা ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল রয়েছে। সচেতনতা না হলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা, যাতে স্বামী-স্ত্রী দুজন কোনোভাবেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক না হন।’