জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট হাতে শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার নাটোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে
জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট হাতে শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার নাটোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে

নাটোরে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা

ভালো ফলাফলের পাশাপাশি মানবিক হওয়ার পরামর্শ

ঘড়িতে তখন সকাল সোয়া নয়টা, মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কৃতী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা মিলনায়তনে ঢুকছিলেন। সোয়া ১০টা নাগাদ মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। চার শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে শুরু হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

আজ রোববার সকালের এই চিত্র ছিল নাটোর জেলা পরিষদ মিলনায়তন চত্বরের। শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলোর আয়োজনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। উপস্থাপনায় ছিলেন বিউটি পারভিন। পরে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নাটোর প্রতিনিধি মো. মুক্তার হোসেন। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এর পরপরই তিনি মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অদম্য মেধাবী পাপ্পু কুমার পাল ও তাঁর মা ভারতি রাণী পালকে। মা ক্লাসের বই পড়তেন আর ছেলে তা শুনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেন। পরে শ্রুতলেখক নিয়ে পরীক্ষা দেন পাপ্পু। এভাবে তিনি এসএসসি, এইচএসসি শেষ করে সিংড়া সরকারি কলেজে সম্মান শেষবর্ষে পড়ছেন। ছয় মাস বয়সে চোখের জ্যোতি হারান পাপ্পু। ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করতে মায়ের প্রাণপণ লড়াইয়ের গল্প শুনে শিক্ষার্থীরা জোরে হাততালি দেন।

অনুষ্ঠানে থিম সং–এ নৃত্য পরিবেশন করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা

পাপ্পু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার কষ্টের কথা তো শুনলে। তোমরা কি কেউ আমার চেয়েও কষ্টে আছ। যদি না থাক তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ জীবনকে এত তুচ্ছ ভাবো কেন? নিজের জীবন বিসর্জন দিতে চাও কেন? আমাকে দেখে তোমরা আরও সংগ্রামী হও, নিজের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলো।’

অজপাড়া গাঁয়ের ছেলে জিপিএ-৫ না পেয়েও কীভাবে সরকারি কর্মকর্তা হলেন, সেই গল্প শোনালেন নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হায়াত। তিনি বলেন, ‘আমার মা–বাবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তবে তাঁরা ছিলেন খুবই জ্ঞানী। সারাক্ষণ খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরের দিনের অঙ্ক পরীক্ষার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। পরীক্ষা দিতে পারলেও অঙ্কে ৩২ নম্বর পেয়ে ফেল করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষাজীবনের একটা পর্যায়ে এসে আমি ভালো কিছু করতে সংকল্পবদ্ধ হই। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দশম হই। সম্মান শ্রেণিতে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই, বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার অর্জন করি।’ তাঁর এই কথা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনেন শিক্ষার্থীরা।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে কুইজ বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার নাটোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে

প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ১৪ বছর বয়সী কাইরান কাজীর কথা শুনেছ। সে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সে মাসিক মিলিয়ন ডলার বেতন পাওয়ার পরও তা ছেড়ে দিয়ে নুতন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী শীর্ষ শ্রেয়ান নেদারল্যান্ডস থেকে দরিদ্রদের জন্য ১৭ কোটি টাকার ওষুধ সংগ্রহ করেছেন। এরা পারলে তোমরাও যে অসাধারণ কিছু করতে পারবে, তা আমি বিশ্বাস করি।’ তিনি শিক্ষার্থীদের মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে না বলার শপথ পড়ান।

অনুষ্ঠানে নবাব সিরাজ–উদ্‌–দৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বারী মির্জা, রাজশাহী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক অলোক কুমার মৈত্র, দিঘাপতিয়া এম কে কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক বক্তব্য দেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের ভালো ফল করার পাশাপাশি নিজেদের মানবিক হয়ে ওঠার প্রতি গুরুত্ব দেন।

আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।