
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির ‘গুম হওয়া’ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও ছেলে আবরার ইলিয়াস মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তাঁরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ইলিয়াস আলী এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাহসিনা রুশদীর লুনা ও আবরার ইলিয়াস মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন তাহসিনা রুশদীর।
তাহসিনা রুশদীর লুনা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। অন্যদিকে তাঁর ছেলে আবরার ইলিয়াস মায়ের ‘ব্যাকআপ প্রার্থী’ হিসেবে স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হন। বিএনপির অভিযোগ, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে ‘গুম’ করেছে। সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে সিলেটে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে জোরালো আন্দোলন গড়ে ওঠে। আঞ্চলিক ইস্যুতে এমন আন্দোলন অতীতে খুব কমই দেখা গেছে। ১৩ বছর আগে গুম হলেও সিলেটে সব ধরনের নির্বাচনসহ আন্দোলন-সংগ্রামে ইলিয়াস আলী আলোচনায় ছিলেন।
স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানায়, জাতীয়ভাবে সুপরিচিত নেতা হওয়ায় সিলেট-২ আসনটি স্থানীয়ভাবে ‘ইলিয়াস আলীর আসন’ হিসেবে পরিচিত। এখানে টানা তিনবার নির্বাচন করে তিনি দুবার বিজয়ী হন। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর ধীরে ধীরে আসনটিতে তৎপর হন তাহসিনা রুশদীর লুনা। পরে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও পান।
একই সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর বিএনপি একবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়—একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান তাহসিনা রুশদীর লুনা। তবে আদালতের আদেশে তাঁর প্রার্থিতা স্থগিত হলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান। ওই নির্বাচনে মোকাব্বির খানের পক্ষে তাহসিনার সমর্থন ছিল এবং তিনি নির্বাচনে জয়ী হন।
গতকাল বিকেলে বিশ্বনাথে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। এ সময় তিনি বলেন, ছেলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া একটি নির্বাচনী কৌশলের অংশ মাত্র।
সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনা ও আবরার ইলিয়াস ছাড়া আরও সাতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হান্নান, জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির উদ্দিন, গণফোরামের মুজিবুল হক, গণ অধিকার পরিষদের জামান আহমদ সিদ্দিকী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুস শহীদ।