হত্যা মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে প্রত্যাহারের আবেদনের প্রতিবাদে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী নগরের সিটি প্রেসক্লাবে
হত্যা মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে প্রত্যাহারের আবেদনের প্রতিবাদে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী নগরের সিটি প্রেসক্লাবে

বিএনপি নেতার সুপারিশে হত্যা মামলাকে রাজনৈতিক দেখিয়ে ‘প্রত্যাহারচেষ্টার’ অভিযোগ

রাজশাহীতে পূর্বশত্রুতার জেরে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলাকে ‘রাজনৈতিক’ দেখিয়ে প্রত্যাহারের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির ভাই ও হত্যা মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলছেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ (চাঁদ) আওয়ামী লীগ-সমর্থক আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশও করেছেন।

আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রঞ্জু আহমেদ এই অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। হোয়াটসঅ্যাপে এই বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সংবাদ সম্মেলনে রঞ্জু আহমেদ বলেন, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রায়পুর বাজারে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন তিনি। এ সময় তাঁর চিৎকারে ভাই মনিরুল ইসলাম, মো. মন্টু ও বাবা শামসুল হক এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাঁদের ওপরও চড়াও হয়। হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত মো. মন্টুকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। ওই দিনই তিনি বাদী হয়ে ২২ জনকে আসামি করে চারঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতে বিচারাধীন। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৪ অক্টোবর যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

মামলাটি যখন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই আসামিরা এটিকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে প্রত্যাহারের জন্য অপচেষ্টা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ রঞ্জু আহমেদের। তিনি বলেন, ১ নম্বর আসামি এমদাদুল হক ওরফে আবু তালেবসহ আটজন আসামি মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। অথচ এ মামলা পুরোপুরি দুটি পরিবারের পূর্বশত্রুতার জের। এজাহার বা অভিযোগপত্র, কোথাও রাজনৈতিক কোনো বিষয় উল্লেখ নেই।

রঞ্জু আহমেদ আরও বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ প্রত্যেক আসামির আবেদনপত্রে ‘জোর সুপারিশ করছি’ লিখে স্বাক্ষর করেছেন। অথচ আসামিরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের অনুসারী।

রঞ্জু আহমেদ নিজেকে ও তাঁর পরিবারকে বিএনপির সমর্থক দাবি করে বলেন, ‘আমি নিজে বিএনপি করার কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর জেল-জুলুম হুলিয়ার মধ্যে জীবন পার করেছি। ৫ আগস্টের পর এখনো যদি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার জন্য আবু সাঈদের মতো নেতারা কাজ করেন, তাহলে দল ও দেশ কোথায় যাবে আমরা জানি না।’

সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী দাবি করেন, প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চেয়ারম্যান ৯ বিঘা জমির বিনিময়ে মামলাটি আপসের প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় সম্প্রতি আবু সাঈদ নিজে তাঁদের বাড়িতে এসে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। রাজি না হওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, যার কারণে তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ ঘটনায় রঞ্জু আহমেদ জেলা প্রশাসক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর এই আবেদনে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী সুপারিশ করেছেন বলেও তিনি জানান। এ ছাড়া আবু সাঈদের বিরুদ্ধে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।

ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে রঞ্জু আহমেদ বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার আবেদন, এই হত্যা মামলা যেন কোনোভাবেই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা না হয়।’