
দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে তাঁর দল বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আজ রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে রংপুর সফরে এসে নগরের সেনপাড়ায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ মন্তব্য করেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘ওনাকে (তারেক রহমান) যেভাবে, যে প্রক্রিয়ায় রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, এটা আমরা কোনো সময় সমর্থন করিনি। এখন উনি আবার রাজনীতিতে পুনরায় যোগদান করেছেন। তিনি বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ। এখন বাংলাদেশের জন্য যে চ্যালেঞ্জ, ওনার দলের সময়ে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।’
দেশে এখন রাজনৈতিকভাবে সহাবস্থান সবচেয়ে দরকার উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘হিংসা, মারামারি, কাটাকাটি করব না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য দাঁড়াব। উনি (তারেক রহমান) ওনার প্রথম বক্তব্যে এটা বলেছেন। এটা আমি পছন্দ করেছি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে এখন যে সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যার কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। এটা আমরা মনে করি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ওনার নেতৃত্বে ওনার দল একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
দেশে সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আনতে হলে সব দলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া হলো, অন্তত একটা খারাপ অবস্থান আমরা লক্ষ করছি। আমাদের দেশে অনেক নির্বাচন খারাপ হয়েছে। এখন এই নির্বাচনটা আমাদের আশঙ্কা খারাপ হবে। তবে আগের যেগুলো হয়েছে, তার চেয়ে খারাপ হবে নাকি সমকক্ষ হবে, এটিই এখন সামনের দিনে দেখার বিষয়।’
নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছে না। জাতীয় পার্টির তিনজন প্রার্থী কারাগারে জুলুমবাজির শিকার হচ্ছেন। জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থীর নামে মিথ্যা মামলা আছে। তাঁদের এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ও পুলিশ পরোক্ষভাবে বলছেন, তাঁরা আসলে গ্রেপ্তার হতে পারেন। এখন অনেকে এলাকায় যাবেন কি না, এটা নিয়ে সন্দিহান।’
নির্বাচন কমিশন ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণ করছে অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেন, ‘তাদের সঙ্গে এখনো দেখা করার সুযোগ পাইনি। নির্বাচনী মনোনয়ন ফরমে কিছু জটিল বিষয় ঢোকানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কিছু প্রার্থীকে বাতিল করা হতে পারে।’ শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে থাকার জন্য এসেছি। আমরা বুঝেশুনে এসেছি, আমাদের ওপরে অন্যায় করা হচ্ছে। বেআইনিভাবে আমাদের নির্বাচন থেকে বের করার একটি উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। সেটার জন্য আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নির্বাচনে এসেছি, এটাকে প্রমাণ করার জন্য আমাদের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। অন্যায়টা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য। আমরা যদি থাকতে পারি, শেষ পর্যন্ত থাকব। যদি বাধ্য হই, আমরা জানে মারা পড়ছি, তখন হয়তো অন্য ব্যবস্থা হতে পারে।’
জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছে এমন অভিযোগের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘আমার মনে হয় বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন আওয়ামী ফোবিয়াতে ভুগছেন।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা এখন নমিনেশন সাবমিট করছি। আমাদের নমিনেশন কতগুলো বৈধ হয়, কী হয়, এগুলো আমরা দেখব। তারপর আমরা চিন্তা করব পরবর্তী পদক্ষেপ। জোটে যেতে পারি, না-ও যেতে পারি। জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত কম। কোনো আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে পারে কারও সঙ্গে।’
তিন দিনের সফরে আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে রংপুরে আসেন জাপা চেয়ারম্যান। নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান দলটির কো-চেয়ারম্যান ও ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর জেলার সদস্যসচিব আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগরের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. লোকমান হোসেন প্রমুখ। রংপুরে পৌঁছে জি এম কাদের প্রথমে নগরের মুন্সিপাড়া কবরস্থানে তাঁর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেন। পরে দর্শনা পল্লী নিবাসে জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন।