
রাজবাড়ীতে জুলাই যোদ্ধা রিকশাচালক শওকত মণ্ডলের (৪৮) আকুতি অবশেষে পূরণ হয়েছে। তাঁর স্ত্রী আকলিমা বেগমের ডান পায়ে হাইটেক কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত গাজীপুরের টঙ্গীর একটি প্রতিষ্ঠান আকলিমা বেগমকে এই সহায়তা দিয়েছে। দুই সপ্তাহ ওই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থেকে কৃত্রিম পা সংযোজনের পর এই দম্পতি গতকাল রোববার রাতে রাজবাড়ী ফিরেছেন।
শওকত মণ্ডলের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের কাঁচারাঁধা ভরাত গ্রামে। গ্রামে জায়গাজমি না থাকায় তিনি রাজবাড়ী পৌরসভার লোকোশেড ছোট নূরপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।
গত ৯ অক্টোবর ‘জুলাই যোদ্ধা রিকশাচালকের আকুতি, “স্ত্রীর জন্য একটি পা চাই”’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীর ব্রেইলপ্রেস ও আর্টিফিশিয়াল লিম্বস সেন্টারে দুই সপ্তাহ রেখে ঢাকার বারিধারার রোটারি ক্লাবের আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে গত শনিবার ১৪ জনকে হাইটেক কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। তাঁদের মধ্যে আকলিমা বেগমও আছেন।
আজ সোমবার দুপুরে ছোট নূরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে আকলিমা বেগম বসে আছেন। তিনি কৃত্রিম পা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের দেখতে আসছেন।
শওকত বলেন, ‘আপনারা না থাকলে হয়তো আমার স্ত্রী এভাবে চলাচল করতে পারত না। আপনাদের সহযোগিতায় এখন তেমন কষ্ট নেই। রান্না-খাওয়ারও তেমন সমস্যা হবে না। তবে তাঁর শরীরে ডায়াবেটিস, চুলকানিসহ নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছি না।’
শওকত আরও বলেন, ‘দুই সপ্তাহ স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে ছিলাম। আমাদের মতো আরও অনেকে সেখানে ছিলেন। থাকা ও খাওয়ার সব কাজ তাঁরা করেছেন। চিকিৎসা শেষে শনিবার রাতে সাভারে মেয়ের বাসায় ছিলাম। পরদিন রোববার রাতে এলাকায় ফিরেছি।’
আকলিমা বেগম বলেন, ‘আগে চলাফেরা তেমন করতে পারতাম না। ক্রাচে ভর করে অনেক কষ্টে চলতে হতো। স্বামীর আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় নিজের পা লাগানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না। আপনাদের সহযোগিতায় আজ পায়ের ব্যবস্থা হয়েছে, এখন তেমন কষ্ট নাই। স্বামীর আয়ের ব্যবস্থা হলে আমার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম।’
প্রায় ১৫ বছর ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় রিকশা চালিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন শওকত মণ্ডল। খরচ সামলাতে না পেরে ২০১৫ সালে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামে পাঠান। গত বছর জুলাই আন্দোলনে শাহবাগ এলাকায় আহত শিক্ষার্থীদের রিকশায় করে হাসপাতালে আনা–নেওয়ার সময় তাঁর শরীরে আটটি গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই যোদ্ধার কার্ড করে দেওয়া হয়। সরকারিভাবে প্রথমে এক লাখ টাকার চেক, পরে ২০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা পান। কিন্তু এখনো তিনি ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারেন না। সুযোগ পেলে পুরোনো লোহা-টিনের ব্যবসা করেন। গত রমজান মাসে স্ত্রী আকলিমার ডান পায়ে লোহা বিঁধে ক্ষত দেখা দেয়। পচন ধরায় হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন চিকিৎসকেরা।