
শুক্কুরি বেগমের বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। বছর ১৫ আগে স্বামী আবদুল লতিফের মৃত্যুর পর থেকে মানুষের সহায়তায় চলে তাঁর জীবন। বড় মেয়ের ঘরের ছেলে আল আমিন (১৭) ও মেয়ে মারিন আক্তারকে (১১) নিয়ে শুক্কুরির সংসার। নিজের আড়াই শতক জায়গায় একটি ছাপরা তাঁর, সেটাও জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলেই চাল চুইয়ে ঘরের মেঝে ভিজে যায়। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না।
ঘর মেরামত ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে একবেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ার জন্য মাসখানেক আগে ৫০০ টাকা চেয়েছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে। ওই ব্যক্তি সহযোগিতা করেন। শুক্কুরির কষ্টের বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামালকে জানান। কায়সার কামাল তা শুনে নিজের উদ্যোগে একটি আধাপাকা ঘর উপহার দিলেন। সঙ্গে আসবাবপত্র, খাবার ও কিছু টাকা সহযোগিতা করেন।
ঘটনাটি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার খুজিউড়ায়। আজ শুক্রবার দুপুরে কায়সার কামালের পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বজলুর রহমান পাঠান শুক্কুরিকে ওই ঘরের চাবিসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বুঝিয়ে দেন। এ সময় জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা এম এ জিন্নাহ, স্মরণিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন, কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল, কুল্লাগড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, পৌর যুবদলের সদস্য শামীম আহমেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শুক্কুরি বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর শুক্কুরি বেগম তাঁর বড় মেয়ে ফিরোজা আক্তারের স্বামীর বাড়ি কলমাকান্দায় আশ্রয় নেন। কিন্তু বছর চারেক পর ফিরোজা অসুস্থ হয়ে মারা গেলে শুক্কুরিকে সেখান থেকে চলে আসতে হয়। এরপর আশ্রয় নেন খুজিউড়ার পাশের গ্রাম কাকড়াকান্দায় মেজ মেয়ে লাইলি আক্তারের বাড়িতে। বছর তিনেক পর লাইলিও মারা যান। দুই মেয়েকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে শুক্কুরি ঠাঁই নিতে চান পূর্বধলায় ছোট মেয়ে শিউলি আক্তারের বাড়িতে। অভাবের সংসারে শিউলি বৃদ্ধ মাকে রাখতে চাননি। বাধ্য হয়ে শুক্কুরি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। সেখানে ছাপরা বানিয়ে মানুষের সহায়তায় চলেন। সাত বছর ধরে শুক্কুরির কাছে বড় মেয়ের দুই সন্তান আল আমিন ও মারিন আক্তার।
আল আমিন দিনমুজুরি করে আর শুক্কুরি ভিক্ষাবৃত্তি করে যা পান, তা দিয়ে তিনজন খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। চলতি বর্ষায় শুক্কুরির ছাপরাটির চাল ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। মাসখানেক আগে মেরামত করার জন্য শুক্কুরি কাকড়াকান্দা গ্রামের শাহ আলমের কাছে ৫০০ টাকা চান। এ সময় শাহ আলমের সঙ্গে থাকা শিবগঞ্জ গ্রামের শামিম আহমেদ খান ও আলী হোসেনের কাছে তিনি খাবার কিনে দেওয়ার সহযোগিতা চান। ওই তিন ব্যক্তি শুক্কুরিকে সহযোগিতা করে তাঁর বাড়িতে যান।
পরে তাঁরা শুক্কুরির করুণ অবস্থা দেখে বিষয়টি সেখান থেকে মুঠোফোনে কায়সার কামালের সঙ্গে কথা বলেন। ভিডিও কলে কায়সার কামাল শুক্কুরির সঙ্গে কথা বলে তিনি নিজ উদ্যোগে একটি ঘর উপহার দেন। সঙ্গে টয়লেটের ব্যবস্থাসহ শোবার জন্য খাট, বসার জন্য প্লাস্টিকের চেয়ার, বিদ্যুৎ–সংযোগ, বৈদ্যুতিক পাখা, তিন মাসের খাবারের ব্যবস্থাসহ নগদ অর্থ সহায়তা করেন। আজ দুপুরে শুক্কুরির কাছে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ঘর পেয়ে শুক্কুরি বেগম বলেন, ‘আমি বুড়া মানুষ। সাহায্য মাইগ্গা খাই। ছুট্টু দুইডা নাতি-নাতনি লইয়া খুব কষ্ট কইরা দিন কাটাই। নাতিডা মাইনসের বাড়িত কাম করে। ছাপরাঘরে বৃষ্টির দিনে কষ্ট আরও বাইড়া যায়। আমি ঘর বান্দনের সাহায্য চাইতে গেলে আমারে টিনের সুন্দর ঘর বাইন্দা দিছে। সঙ্গে অনেক কিছু দিছে। আমার নাতনি মাদ্রাসায় পড়ে, তার খরচও দিবো কইছে। আমি দোয়া করি আল্লা যেন তাঁরে সুখি করে। আমি অহন টিনের ঘরে নাতি-নাতনি লইয়া থাকবাম তা স্বপ্নেও ভাবছিলাম না।’
শাহ আলম বলেন, শুক্কুরি বেগমের দুর্দশার বিষয়টি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘর করে দেওয়াসহ আনুষঙ্গিক সব কিছুর ব্যবস্থা করেন কায়সার কামাল। তিন সপ্তাহ সময়ের মধ্যে লোহার এঙ্গেল দিয়ে আধাপাকা ঘরটি তৈরি ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে নিয়ে তাঁর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা লেগেছে।
এ বিষয়ে কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানবকল্যাণ বোধ ও দায়িত্বের জায়গা থেকে শুক্কুরি বেগমকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে।’