
লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনকে কুষ্টিয়ায় দাফন করার প্রস্তুতি নিয়েছে তাঁর পরিবার। এ জন্য আজ রোববার দুপুর থেকে কুষ্টিয়া পৌর গোরস্তানে কবর খোঁড়ার কাজ চলছে।
বেলা একটার দিকে পৌর গোরস্তানের খাদেম নূর ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ফরিদা পারভীনের আত্মীয় আবদুর রাজ্জাক কবর খোঁড়ার জন্য বলেছেন। সে জন্য গোরস্তানে ফরিদা পারভীনের বাবা-মায়ের কবরে তাকে দাফনের জন্য খোঁড়া হচ্ছে।
গতকাল শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন (৭১)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। ১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়ায় জন্ম নেওয়া এই বরেণ্য শিল্পী গানে গানে ৫৫ বছর কাটিয়েছেন। তিনি স্বামী ও চার সন্তান রেখে গেছেন।
বেলা একটার দিকে গোরস্তানে গিয়ে দেখা যায়, দুজন ব্যক্তি কবর খোঁড়ার কাজ করছেন। পাশে গোরস্তানের খাদেম নূর ইসলাম দাঁড়িয়ে আছেন। কবরটির চারপাশ দেয়ালঘেরা। এক পাশে নামফলকে লেখা ‘মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পিটিআই রোড, কুষ্টিয়া। মৃত্যু: ১৩ই এপ্রিল ১৯৯৬ সন।’
গোরস্তানের খাদেম নূর ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে এ গোরস্তানে খাদেমের দায়িত্বে আছেন। ফরিদা পারভীনের পরিবারের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। ফরিদার বাবা দেলোয়ার হোসেন ১৯৯৬ সালে মারা যান। তাঁকে দাফনের জন্য কবর খুঁড়েছিলেন। এরপর তাঁর মা রৌফা বেগম মারা যান। তাঁকেও একই কবরে দাফন করেছিলেন। আজ ফরিদার লাশ আসছে। সব ঠিক থাকলে তাঁকেও একই কবরে শায়িত করা হবে। এ জন্য কবর প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ফরিদা পারভীনের গানের হাতেখড়ি মাগুরা জেলায়। ১৯৫৭-৫৮ সালে চার-পাঁচ বছর বয়সে তাঁকে গানে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তী। এরপর যেখানেই থেকেছেন, সেখানেই বিভিন্নজনের কাছে গানের তালিম নিয়েছেন তিনি। স্বরলিপি দিয়ে নজরুলের গান হারমোনিয়ামে ও কণ্ঠে তোলার কাজটি তিনি ওস্তাদ মীর মোজাফফর আলীর কাছেই প্রথম শেখেন। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত নজরুলসংগীতশিল্পী নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পর লালন সাঁইজির গানের সঙ্গে ফরিদার পারভীনের যোগাযোগ, তখন তিনি কুষ্টিয়ায় থাকতেন। সেখানে তাঁদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন মোকছেদ আলী সাঁই। ১৯৭৩ সালে ফরিদা পারভীন তাঁর কাছেই ‘সত্য বল সুপথে চল’ গান শেখার মাধ্যমে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেন। মোকছেদ আলী সাঁইয়ের মৃত্যুর পর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে লালনগীতির তালিম নেন।
লালন সাঁইজির গানের বাণী ও সুরকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বদরবারেও তিনি লালন সাঁইয়ের বাণী ও সুরকে প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশে লালনগীতি পরিবেশন করেছেন।
লালনগীতিতে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। এর বাইরে ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (নারী) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কার লাভ করেন।