শরীয়তপুরের জাজিরায় আলমাস সরদার (৩২) নামের এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার উমরদি মাদবরকান্দি এলাকার একটি বাগান থেকে মাটিচাপা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।
আলমাস উমরদি মাদবরকান্দি গ্রামের মৃত সহন সরদারের ছেলে। তিনি বিএনপি নেতা খবির উদ্দিন সরদার হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আলমাসসহ ১৮ জনকে আসামি করে খবিরের ভাই দানেশ সরদার বুধবার রাতে জাজিরা থানায় হত্যা মামলা করেন। এক দিন পরই আলমাসের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের উমরদি মাদবরকান্দি এলাকায় একটি জামে মসজিদ কমিটি নিয়ে আলমাস সরদারের পরিবার ও খবির সরদারের পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল। প্রায়ই দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঝগড়া ও বাগ্বিতণ্ডা হতো। ওই বিরোধের জের ধরে কয়েক দিন আগে খবিরের পরিবার জাজিরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে বের হলে খবিরের ওপর হামলা চালানো হয়। তাকে কুপিয়ে পাশের একটি ডোবায় ফেলে মারা হয়। খবিরের পরিবার আলমাস ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দায়ী করেন। নিহত খবিরের বড় ভাই দানেশ সরদার উমরদি মাদবরকান্দি জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি।
খবিরের রক্তাক্ত দেহ যে ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়, তার পাশে গতকাল সকালে আলমাসের ব্যবহৃত একটি জুতা পাওয়া যায়। এরপর গ্রামে প্রচার হতে থাকে যে ডোবার মধ্যে আলমাসের মরদেহ ভেসে উঠেছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়, কিন্তু কোনো লাশ না পেয়ে ফিরে আসে। এরপর আলমাসের স্বজনেরা ওই ডোবা ও আশপাশের এলাকায় সন্ধান চালাতে থাকেন। গতকাল রাতে ওই ডোবার পাশের একটি বাগানে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়।
আলমাসের বোন লিপি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দানেশ সরদারের পরিবারের সদস্যরা আমার ভাইকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। দুই দিন ধরে তাকে খুঁজেছি। অবশেষে একটি বাগানে মাটিচাপা অবস্থায় খুঁজে পেলাম। তারা আমার এক ভাইকে মেরে ফেলেছে, আরেক ভাই ও চাচাদের হত্যা মামলার আসামি করেছে। ’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে খবিরের পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বিভিন্ন জিনিসপত্র সরাতে শুরু করেন এবং আত্মগোপনে চলে যান। বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি। খবিরের বড় ভাই দানেশ সরদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গেলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ রয়েছে।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, মসজিদ কমিটি নিয়ে বিরোধের কারণে এক বিএনপি নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই হত্যা মামলার একজন আসামির লাশ বৃহস্পতিবার রাতে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি অর্ধগলিত হওয়ায় শরীরের আঘাতের চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।