ফুটবল খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে মাত্র ৪০-৪৫ হাজার টাকার জন্য। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে মায়ের সঙ্গে প্রতিমা
ফুটবল খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে মাত্র ৪০-৪৫ হাজার টাকার জন্য। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে মায়ের সঙ্গে প্রতিমা

বকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে

আর্থিকভাবে অচ্ছল পরিবারের মেয়ে প্রতিমা মুন্ডা। তবে দারিদ্র্য তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবলে দেখিয়েছেন অসাধারণ নৈপুণ্য। দেশের হয়ে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলে, অংশ নিয়েছেন ভারতের আন্তর্জাতিক সুব্রত কাপে। এখন সেই প্রতিমার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে মাত্র ৪০-৪৫ হাজার টাকার জন্য।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রতিমা মুন্ডা। বিকেএসপির কলেজ শাখা থেকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রতিমার অভিভাবককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, তাঁর এ বছরের জুন পর্যন্ত বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। ওই চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে প্রশিক্ষণার্থীকে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ দেওয়া হয়। আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে।

এই চিঠি পেয়ে প্রতিমা ও তাঁর বাবা-মা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। বাবা শ্রীমন্ত মুন্ডা অসুস্থ, সব সময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে পারেন না। মা সুনিতা মুন্ডা সপ্তাহে গড়ে তিন-চার দিন কৃষিশ্রমিকের কাজ পান। প্রতিদিনের মজুরি ২০০ টাকা। মাসে দুজন মিলে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার বেশি আয় হয় না।

প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা বলেন, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় তাদের খুলনার কয়রা উপজেলায় থাকা বাড়িঘর ভেঙে যায়। জলোচ্ছ্বাসে সব ভেসে যায়। এক বছর বয়সী প্রতিমা ও তিন বছর বয়সী পূর্ণিমাকে নিয়ে তাঁরা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাল্লে গ্রামে আশ্রয় নেন। পরে একটি বেসরকারি সংস্থা তাদের জন্য তালা উপজেলার দুর্গাপুরে ৩ শতাংশ জমি কিনে দেয়। সেখানে ঘর করে থাকছেন তাঁরা।

প্রতিমা বলেন, এ বছর তিনি জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে যোগ দিতে পারেননি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার টাকার জন্য বলেছে। এখন চিঠি দিয়েছে। টাকা না দিলে আর হয়তো বিকেএসপিতে থাকতে পারবেন না—এমন আশঙ্কা তাঁর। ছুটিতে বাড়ি এসে তিনি তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু বাকিটা কীভাবে দেবেন, তা বুঝতে পারছেন না।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার সীমিত ফান্ডের মধ্যে প্রতিমাকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার মণ্ডল বলেন, ‘২০১৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিমা বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলেছিল। তখন থেকে ওর ফুটবলের প্রতিভা চোখে পড়ে। সাতক্ষীরার ফুটবল প্রশিক্ষক খন্দকার আরিফ হাসান তাঁকে নিজের তত্ত্বাবধানে ওই বছর সাতক্ষীরা নিয়ে এসে শহরের একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। পাশাপাশি ফুটবল প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। পরের বছর প্রতিমা বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। এর পর থেকে সে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলছে।’

এই অল্প কিছু টাকার জন্য যদি প্রতিমার মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় মাঠ হারায়, সেটা খুবই দুঃখজনক হবে বলে মন্তব্য করেন সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় হাসনে জাহিদ (জজ)। তিনি প্রতিমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান।