সুধী সমাবেশে কথা বলছেন একজন পাঠক। বুধবার বিকেলে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে
সুধী সমাবেশে কথা বলছেন একজন পাঠক। বুধবার বিকেলে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে

দুই জেলায় সুধী সমাবেশ

বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য প্রকাশে অবিচল প্রথম আলো

সঠিক ও নির্ভরযোগ্য খবর প্রকাশে প্রথম আলোর ওপর পাঠকের আস্থা বেশি। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য প্রকাশে অবিচল পত্রিকাটির সংবাদে নিরপেক্ষ অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়, সাহসের সঙ্গে দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখে থাকে। প্রতিবেদনে সব পক্ষের বক্তব্য থাকে। প্রথম আলোর কাছে প্রত্যাশা, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে তারা আজীবন অবিচল থাকবে।

আজ বুধবার বিকেলে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরির সৈয়দ মুজতবা আলী মিলনায়তনে প্রথম আলো আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মৌলভীবাজার ও পটুয়াখালীতে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।

মৌলভীবাজার

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম বলেন, ‘আমি শুরু থেকে প্রথম আলোর পাঠক। প্রথম আলোর উদ্যোগে বিভিন্ন রাউন্ড টেবিল হতে দেখি। এটা আমার ভালো লাগে। অনেক কিছু জানা যায়।’

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী বলেন, ‘প্রথম আলোর খবরে অনেক তথ্য-উপাত্ত থাকে। সত্য তথ্য প্রকাশ করা হয়, এটাই বড় কথা। পরিপূর্ণ নিউজ পাওয়া যায়। অনলাইনে সহজে প্রথম আলো পড়তে পারি।’

শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লাস টেন থেকে একটু একটু করে প্রথম আলো পড়া শুরু করেছিলাম। এখনো প্রথম আলো পড়ছি। প্রথম আলোর পরিকল্পিত, গোছানো নিউজ দেখে মনে হয়, পত্রিকা সঠিক পথে আছে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফাহাদ আলম বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য প্রকাশ করে থাকে প্রথম আলো। প্রথম আলোর সংবাদ আস্থার সঙ্গে নিতে পারি। আমরা আশা করি, এই সাহসিকতা সব সময় বজায় রাখবে।’

চিকিৎসক, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক এম এ আহাদ বলেন, ‘আমি শুরু থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে আছি। এখনো খারাপ কিছু পাইনি। শুক্রবারও গাড়ি পাঠিয়ে পত্রিকা সংগ্রহ করি। আমার প্রত্যাশা, এভাবে পক্ষপাতিত্ব না করে যেন সংবাদ পরিবেশন অব্যাহত থাকে।’

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। বুধবার বিকেলে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে

অধ্যক্ষ মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রথম আলো সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন করছে। এটা এখনো আছে। দেশের যেকোনো প্রান্তে খুব সকালে প্রথম আলো পাওয়া যায়, এর বিপণনব্যবস্থা খুব ভালো। আমি চাই গ্রামীণ সংবাদ যেন আরও গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়।’

লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, ‘দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী তরুণ। এই তরুণেরা দেশকে নিরাপদ মনে করছে না। এই জায়গায় তরুণদের নিয়ে প্রথম আলো ভূমিকা রাখতে পারে।’ পরিবেশকর্মী আ স ম ছালেহ সুহেল বলেন, ‘বন-হাওর এখন বিপন্ন হচ্ছে। পরিবেশের এই দিকটি নিয়ে বেশি করে লিখতে হবে।’

প্রগতি লেখক সংঘ মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক কবি মহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পথচলা। আমি দেখেছি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশকে নিয়ে লিখতে গেলে প্রথম আলোর রেফারেন্স ব্যবহার করে। প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠতার নিদর্শন হয়ে উঠেছে।’

প্রথম আলোর নানামুখী উদ্যোগ, কর্মতৎপরতাসহ সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরেন পত্রিকাটির উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি। তিনি বলেন, ‘আমরা পাঠকের কাছাকাছি যাই, সমালোচনা থাকলে জানার চেষ্টা করি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সাহসের সাথে লেখা, সাহসের সাথে চলা। আমাদের ভিত্তি হচ্ছে পাঠকের আস্থা। ধীরে ধীরে এই আস্থা গড়ে উঠেছে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আবদুল ওদুদ, কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক লতিফা নিলুফার পাপড়ি, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সহসভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং, শিক্ষক মুহিবুর রহমান, উদ্যোক্তা জাহেদ আহমদ চৌধুরী ও নাট্যকর্মী শাহীন ইকবাল বক্তব্য দেন।

সমাবেশ সঞ্চালনা ও স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মৌলভীবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আকমল হোসেন। এতে অন্যদের মধ্যে প্রবীণ সাংস্কৃতিক সংগঠক সৈয়দ আবদুল মোত্তালেব, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মোহিবুল আমীন, বাপার সদস্যসচিব শিবপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রানু তালুকদার, প্রভাষক শক্তিপদ পাল, কবি কন্দর্প বিজয় চৌধুরী, প্রভাষক তাসলিমা মুজাহিদ, সাবেক জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন, পত্রিকার এজেন্ট রতন কান্তি চাকলাদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি ও পাঠক উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে বন্ধুসভার সদস্যরা সহযোগিতা করেন।

প্রথম আলোর ইতিবাচক দিকসহ পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন প্রথম আলোর হেড অব ডিপ নিউজ রাজীব আহমেদ। বুধবার বিকেলে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে

পটুয়াখালী

পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের আতাহার উদ্দিন মিলনায়তনে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পটুয়াখালী বন্ধুসভার সাবেক সহসভাপতি ইয়া হাদিয়া সোনামনির সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর পটুয়াখালী প্রতিনিধি বিলাস দাস। এতে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাজেদুল ইসলাম, পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আল নোমান, বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক অশোক কুমার দাস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন খাসকেল, সমাজকর্মী মাহফুজা আক্তার, সাবরিনা শাহনাজ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন, কাজী দিলিপ, সুভাষ চন্দ্র, আনিসুর রহমান, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রথম আলো সবার চেয়ে আলাদা। দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য পত্রিকাটি সামনের সারিতে থাকবে।’

জলবায়ু নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্বেচ্ছাসেবক মো. কাওসার আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে দক্ষিণাঞ্চল। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোর জলবায়ু-সংক্রান্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

পটুয়াখালীতে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন সমাজকর্মী মাহফুজা আক্তার। বুধবার বিকেলে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো বহু পত্রিকার ভিড়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের জন্য আমরা প্রথম আলোর দিকে তাকিয়ে থাকি।’ সমাজকর্মী মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় অসহায়, অবহেলিত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের কথা বলে আসছে। প্রথম আলোকে এটা অব্যাহত রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পাঠকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পাঠকেরা প্রথম আলোর কাছে তাঁদের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এ সময় পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর হেড অব ডিপ নিউজ রাজীব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময়ই ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে গেছে। এ জন্য বিভিন্ন সময় পত্রিকাটিকে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে প্রথম আলো কখনোই আপস করেনি আর ভবিষ্যতেও করবে না।’

সমাবেশে পটুয়াখালী বন্ধুসভার উপদেষ্টা রাহিমা সরোয়ার, সভাপতি মেহেদী হাসান আসাদ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হাসানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এ বি এম মিজানুর রহমান, মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এদিন প্রথম আলোর প্রশংসা করে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক নিহার বিন্দু বিশ্বাস।