পোষা পাখি দিয়ে পাখি শিকার করেন শিপন মিয়া ও রায়হান উদ্দিন নামের দুজন। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায়।
পোষা পাখি দিয়ে পাখি শিকার করেন শিপন মিয়া ও রায়হান উদ্দিন নামের দুজন। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায়।

পোষা ঘুঘুর ফাঁদে ফেলে পাখি শিকার

লতাপাতা দিয়ে ঝোপ বানিয়ে তার ওপরে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় ফাঁদ। এর সঙ্গে চিকন সুতা দিয়ে পা বেঁধে রাখা হয় পোষা ঘুঘুপাখিকে। হাতে থাকা বাঁশের লম্বা কঞ্চি দিয়ে সেই পাখির ফাঁদ রাখা হয় কোনো একটি গাছের মগডালে। বাঁধা ঘুঘু যখন ডাকাডাকি করে, তখন অন্য ঘুঘু এসে জালের ফাঁদে আটকা পড়ে। এভাবেই পোষা পাখি দিয়ে পাখি শিকার করেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় গোবিন্দপুর এলাকার শিপন মিয়া ও রায়হান উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি।

সম্প্রতি হোসেনপুরের গোবিন্দপুর সড়কের ধারে গাছের ডালে পাখি শিকারের ফাঁদ পাতার জন্য ঘুরছিলেন শিপন মিয়া ও রায়হান উদ্দিন। তখন এই দুজনের সঙ্গে আলাপকালে এসব বিষয় জানা যায়। দুজনের হাতে বড় বড় পাতা দিয়ে তৈরি দুটি ফাঁদসহ বেঁধে রাখা দুটি পোষা তিলা ঘুঘুপাখি। নিচে আবার কলাপাতায় তৈরি আরেকটি খাঁচা। সেখানে রাখা হয়েছে শিকার করা একাধিক পাখি। পরে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে প্রতিটি পাখি বিক্রি করেন তাঁরা।

পাখিশিকারি শিপন মিয়া বলেন, শখের বসে তিনি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে পাখি শিকার করেন। ১০–১২ বছর ধরে তিনি এভাবেই পাখি শিকার করে আসছেন। তাঁকে কেউ কোনো দিন বাঁধা দেননি।

সেখানে দেখা গেল, বাঁশের কঞ্চির ওপর পাতা দিয়ে বানানো ফাঁদে বসিয়ে রাখা হয়েছে শিকারি ঘুঘুটি। ফাঁদে বসা সেই ঘুঘুই মূলত শিকারিদের প্রধান অস্ত্র। ডাকাডাকি আর ডানা ঝাপটানো দেখে আশপাশ থেকে অন্যান্য ঘুঘু উড়ে এসে বসার চেষ্টা করে শিকারি ঘুঘুর পাশে। তখন পাতার ওপরে জাল দিয়ে তৈরি ফাঁদে আটকা পরে অন্যান্য ঘুঘু। অনেক সময় পোষা শিকারি ঘুঘুর চোখ অন্ধ করে দেওয়ারও অভিযোগ আছে শিকারিদের বিরুদ্ধে। শিকার করা এসব পাখি আবার প্রকাশ্যে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। এভাবে পাখি শিকার ও প্রকাশ্যে বিক্রি করা হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।

গোবিন্দপুর এলাকার পাখিশিকারি রায়হান উদ্দিন বলেন, এভাবে ফাঁদে ফেলে পোষা পাখি দিয়ে যে পাখি শিকার অন্যায়, সেটা তাঁর জানা নেই। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন নিজ এলাকাসহ আশপাশে ঘুরে পাঁচ-সাতটি ঘুঘুপাখি শিকার করেন তিনি। পরে সেগুলো ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করে দেন।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শীত মৌসুমে অনেক পাখির আনাগোনা থাকে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায়। নির্বিচারে সেসব পাখি শিকারে অনেকেই অভিনব কায়দা ব্যবহার করে থাকেন। মোজাহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন সমাজসেবী বলেন, শীতের সময়ে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে আসে বকসহ নানা অতিথি পাখি। হাওর, বিল, জলাশয় ও গাছে বসা এসব পাখির এমন অবাধ বিচরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন অসাধু শিকারিরা। তাঁরা বিভিন্ন কৌশলে এসব পাখি শিকার করে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, এসব অসাধু পাখিশিকারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ এফ জি মোস্তফা বলেন, এভাবে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার অন্যায়। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে পাখিশিকারিদের জন্য জরিমানাসহ দণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে পাখি শিকার বন্ধে তাঁদের পক্ষ থেকে নানা সচেতনতামূলক প্রচার–প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা অসাধু পাখিশিকারিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।