Thank you for trying Sticky AMP!!

গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের গোলাঘাট গ্রামের টানভিটিপাড়া এলাকার কৃষক আবদুল ফালানের ছোট আকৃতির দুই বছর বয়সী এই ষাঁড়টির ওজন পাওয়া গেছে ৩২ কেজি

এবার আলোচনায় দুই বছর বয়সী ৩২ কেজি ওজনের ষাঁড় ‘জ্যাক’

ষাঁড়টির বয়স দুই বছর হলো চলতি মাসেই। দেশি গরুর জাত হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়টির ওজন ও উচ্চতা খুবই অস্বাভাবিক। কৃষকের গোয়ালে অন্য গরুর চেয়ে বেশি যত্ন পেয়েও আকার বাড়েনি এটি। এমন একটি ষাঁড়ের খোঁজ পাওয়া গেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গোলাঘাট গ্রামের টানভিটিপাড়া এলাকার কৃষক আবদুল ফালানের বাড়িতে।

দুই বছর ধরে আবদুল ফালান গরুটি লালনপালন করছেন। তবে সম্প্রতি জানাজানি হওয়ায় খুদে আকারের এ গরুটি দেখতে প্রতিদিনই তাঁর বাড়িতে লোকজন আসছেন। ওই কৃষকের দুই সন্তান মিলে আদর করে ষাঁড়টির নাম দিয়েছে ‘জ্যাক’।

গত শুক্রবার কৃষক আবদুল ফালানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের একটি জমিতে বাদামি রঙের ষাঁড়টিকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন কৃষকের ছোট ছেলে মেহেদি হাসান। ষাঁড়টি দেখতে প্রায় বড় আকারের ছাগলের সমান। প্রাপ্তবয়স্ক অন্য গরুর মতোই ঘুরে ঘুরে ঘাস খাচ্ছে সে। আশপাশের গ্রামের বেশ কয়েকজন গরুটিকে দেখতে এসেছেন। তাঁরা ছবি তুলছিলেন। এর মধ্যেই গরুর ওজন মাপতে বড় বৈদ্যুতিক বাটখারা নিয়ে হাজির হন কৃষক আবদুল ফালান।

বাটখারায় রেখে ষাঁড়টির ওজন পাওয়া গেল ৩২ কেজি। পরে এর বিভিন্ন আঙ্গিকে দৈর্ঘ্য ও শরীরের বেড় মাপা হয়। ষাঁড়টির সামনের পায়ের ক্ষুরা থেকে শিনার গোড়া পর্যন্ত উচ্চতা ২৩ ইঞ্চি, পেছনের পায়ের গোড়া থেকে পিঠ পর্যন্ত ২৪ ইঞ্চি। শিং থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৩২ ইঞ্চি।

Also Read: ছোট গরু ‘টুনটুনি’

কৃষক আবদুল ফালান জানান, ২০২১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁর একটি গাভি থেকে এ ষাঁড়টির জন্ম হয়। গাভিটি এর আগেও আরও চারটি গরুর জন্ম দিয়েছিল। সেগুলোর উচ্চতা, ওজন স্বাভাবিক আকারে বাড়লেও এই ষাঁড়ের বেলায় ভিন্নতা দেখা গেছে। তিনি বলেন, জন্মের সময় বাছুরটি দেখতে খরগোশের মতো মনে হয়েছিল। খুবই ছোট আকৃতির হওয়ায় এটিকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়েই শঙ্কায় ছিলেন তাঁরা। পরে দু-এক দিনের মধ্যেই বাছুরটি কিছুটা শক্তি পায়। এরপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। তাঁর ছেলেরা এই বাছুরটির নাম দেন ‘জ্যাক’। তবে বছরখানেক বয়স হওয়ার পর দেখা যায়, বাছুরটি আর শারীরিকভাবে বাড়ছে না। তিনি বলেন, অন্য গরুর মতো স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানোর পরেও দুই বছর বয়সে এসে গরুর এমন খর্বাকৃতি রয়ে গেছে।

Also Read: বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু বাংলাদেশে

খোঁজ পেয়ে ষাঁড়টি দেখতে আসেন বরমী গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, এত ছোট গরু আর কখনোই দেখেননি। আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে শুনে গরুটি দেখতে এসেছেন। সাতখামাইর গ্রামের মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ছোট আকারের ষাঁড়টির ছবি বেশ কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনিও এসেছেন গরুর ছবি তুলতে।

কৃষক আবদুল ফালানের সন্তানেরা ষাঁড়টির নাম দিয়েছে জ্যাক। দুই বছরে এটির ওজন হয়েছে ৩২ কেজি

শ্রীপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশি জাতের গরু সাধারণত দেড় থেকে দুই বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। সে হিসেবে গরুটি এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তবে এর আকার ওজন সবই অস্বাভাবিক। এই বয়সে একটি গরুর ওজন কমপক্ষে ১১০ কেজি হওয়ার কথা। উচ্চতা অন্তত চার থেকে পাঁচ ফুট হওয়ার কথা।

এর আগে শ্রীপুরের হায়াতখার চালা গ্রামে এক কৃষকের কাছে বামন বকনা গরুর খোঁজ মিলেছিল। সেটির নাম ছিল টুনটুনি। ২০২১ সালের অক্টোবরে ২২ ইঞ্চি উচ্চতার টুনটুনির ওজন মেপে হয়েছিল ২৩ কেজি। এ ছাড়া ঢাকার সাভারে একটি খামারে রানী নামের আরও একটি বকনা গরুর সন্ধান মিলেছিল। রানীর উচ্চতা ছিল ২০ ইঞ্চি আর ওজন হয়েছিল ২৬ কেজি। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসাবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় নাম ওঠানোর পর ২০২১ সালের আগস্টে অসুস্থ হয়ে রানী মারা যায়। রানী ও টুনটুনি বকনা গরু হলেও শ্রীপুরের জ্যাক ষাঁড়।

শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা একেএম আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেনেটিক কারণে বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে। ওই কৃষকের গরুর ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা ঘটেছে। এটি রেকর্ড গড়ার মতো ছোট কি না, তা আমরা জানি না। শিগগিরই কৃষকের বাড়িতে গরুটি দেখতে যাব।’